আলিম উদ্দিন, কানাইঘাট (সিলেট) : কানাইঘাটের লোভাছড়া চা বাগানের জায়গায় অবৈধ ভাবে স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ীদের প্রায় ২০ লাখ ঘনফুট পাথর মজুদ রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্যে অনুমান ২০ কোটি টাকা। পর্যটন উপযোগী লোভাছড়া চা বাগানের জায়গায় অবৈধ ভাবে পাথর মজুদ রাখায় স্থানীয় সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এছাড়া উক্ত পাথর পরিবহনে স্ক্যাভেটর, ফেলোডার, ট্রাক্টর, ট্রলি ও ট্রাক ব্যবহারের কারণে ধুলোবালী ও শব্দ দোষনে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন রয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহল জানান, লোভাছড়া চা বাগানের জায়গা অবৈধ ভাবে ভাড়া দিয়ে পাথর মজুদ রাখার সুযোগ দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনী।
এছাড়া লোভানদীর তীর ভেঙ্গে যে জায়গা থেকে গভীর গর্ত করে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই জায়গাটিও সরকারের ইজারা বহির্ভূত। যে কারণে উল্লিখিত জায়গায় পাথর উত্তোলন ও মজুদ রাখা উভয়টাই বেআইনী। তাই অভিলম্বে উক্ত জায়গা থেকে পাথর সরানোর দাবী জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লোভাছড়া নদীর বুকে গভীর গর্ত করে ও নদীর তীর ভেঙ্গে পাথর ব্যবসায়ীরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করে লোভানদীর উত্তরপাড়ে লোভাছড়া চা বাগানের বিশাল জায়গা জুড়ে পাথর মজুদ করছে। এতে লোভাছড়া চা বাগানের কয়েক শত একর ক্ষেতের জমিতে চলছে যন্ত্রদানবের তান্ডব।
কানাইঘাটের পর্যটনের সম্ভাবনাময় এলাকা লোভাছড়া চা বাগানের ভুমিতে পাথর মজুদ রাখার কারণে স্থানীয় সচেতন মহলের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লোভাছড়া চা বাগানের জায়গায় পাথর মজুদ করার জন্য একটি মহল চা বাগানের প্রায় ১ শত একর জায়গা পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে অলিখিত ভাবে ভাড়া দিয়ে অবৈধ ভাবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যে কারণে ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামত যান্ত্রিক পদ্ধতিতে লোভানদী থেকে গভীর গর্ত করে পাথর উত্তোলন করে লোভাছড়া চা বাগানের ভূমিতে মজুদ করছেন।
জানা যায়, লোভাছড়া চা বাগানের জায়গায় পাথর মজুদ করছেন স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ী শামীম মেম্বার, সাহাব আহমদ, নুরুল আমিন, জসিম উদ্দিন, আমিনুর রশিদ, আহমদ হোসেন, এনামুল হক, সুলাইমান আহমদ, সিরাজ দর্জি, ময়নুল মেম্বার, কামাল মেম্বার, বিলাল আহমদ, এতিম আলী, রশিদ আহমদ, সাহাব উদ্দিন, হেলাল আহমদ, আব্দুল মালিক, কবির মেম্বার, ইমন আহমদ, হাবিব উল্লাহ, আলিম উদ্দিন, আবু ছিদ্দিক সহ আরো কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ী। তাদের অনেকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, তারা স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে চা বাগানের জায়গায় পাথর মজুদ করছেন।
এদিকে কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইউপি সদস্য তমিজ উদ্দিন বলেন, লোভাছড়া চা বাগানের জায়গায় পাথর মজুদ রাখা সম্পুর্ণ বেআইনী। এতে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, চা বাগানের জায়গা চা বাগানের কাজেই ব্যবহার হবে পাথরের জন্য নয়। এছাড়া চা বাগানের জায়গায় পাথর ভাঙ্গার ডাম্পিং করা হয়েছে। যন্ত্রদানবের তান্ডবে এলাকার পর্যটনের পরিবেশ হুমকির সম্মূখীন। এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য আলমাছ উদ্দিন বলেন, টি বোর্ডের আইন অনুযায়ী চা বাগানের জায়গা চা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার হবে। এখানে পাথর উত্তোলন ও পাথর মজুদ রাখা সম্পুর্ণ বেআইনী। তিনি বলেন, চা বাগানের জায়গায় পাথর উত্তোলন ও মজুদ রাখার জন্য বাগানের সত্ত্বাধীকারী নানকা চেয়ারম্যানকে স্থানীয় কবির মেম্বারের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের টাকা দিয়ে চা বাগানের জায়গা পাথর ব্যবসায়ীরা ভাড়া নিয়েছেন। লোভাছড়া চা বাগান এলাকার পরিবেশ রক্ষায় তিনি প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর ইজারাদার মস্তাক আহমদ পলাশ বলেন, লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর ইজারাকৃত জায়গার যেহেতু সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। সেহেতু লোভাছড়া নদীর যে জায়গা থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই জায়গাটি ইজারা বহির্ভূত কি না সেটা আমি বলতে পারবোনা। তবে লোভাছড়া চা বাগানের জায়গায় পাথর মজুদ রাখা সম্পূর্ণ বেআইনী। কারণ চা বাগানের জায়গা পাথর মজুদ রাখার জন্য সরকার তাদেরকে দেয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের কাছে তিনি দাবী জানান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে লোভাছড়া চা বাগানের সত্বাধীকারি জেম্স লিও ফারগুশন নানকা বলেন, লোভাছড়া নদী থেকে পাথর উত্তোলন করে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীরা লোভাছড়া চা বাগানের কিছু জায়গায় পাথর মজুদ রেখেছেন এটা সত্য। তবে স্থানীয় পাথর মজুদ কারীরা আমাকে কথা দিয়েছেন বর্ষা মৌসূমে লোভানদীতে পানি বৃদ্ধি হলেই তারা পাথরগুলো সরিয়ে নেবেন। এছাড়া চা বাগানের জায়গা ভাড়া দিয়ে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে আলাপকালে কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বারিউল করিম খান বলেন, চা বাগান করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদী সময় দিয়ে সরকারী পাহাড় টিলা বেষ্টিত জায়গা ব্যক্তি বিশেষকে বন্দোবস্ত দেওয়ায়। এতে উক্ত ব্যক্তি শুধু চা উৎপাদনের জন্য সরকারী সেই জায়গাটি ব্যবহার করতে পারবেন। অন্য কোন কাজে চা বাগানের জায়গা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনী। তিনি বলেন, চা বাগানের জায়গায় পাথর মজুদ কিংবা পাথর ভাঙ্গার ভারী যন্ত্রপাতি বা ডাম্পিং করা হলে সে বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Posted ৩:৪৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad