কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা কার্যক্রম চলছে জোড়াতালী দিয়ে। জেনারেটর বিকল, এক্সরে মেশিন নষ্ট, আবাসিক মেডিকেল অফিসার নেই। ইমারজেন্সীতে রোগীদের দায়সারা চিকিৎসা সেবা। ঝগড়া বিবাদ, এক্সিডেন্ট, হাড় ভাঙ্গার কোন রোগী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসলে এক্সরে মেশিন ও মেডিকেল স্পেশালিষ্ট না থাকায় সিওমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল, আবাসন ব্যবস্থা, পানির সমস্যা, চলাফেরা, আয়-রোজগার কম থাকায় হাসপাতালের এ অবস্থা হয়েছে বলে অনেকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। এছাড়া উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নার্স, আয়া, মাঠকর্মী, ল্যাবরেটরী, প্যাথলজি, কন্সালটেন্ট সব জায়গাতে জনবল স্বল্পতা, সবমিলিয়ে ১৫৪টি পদের মধ্যে ৪৮টি পদ শূন্য রয়েছে। সে কারণে উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম চলছে চরম অস্থিরতার মধ্যে। এখানে সরকারী সেবা পাওয়া অনেক সময় রোগীদের কাছে কঠিন ব্যাপার বলে জানিয়েছেন অনেক ভোক্তভোগী।
জানা যায়, কানাইঘাট উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র হাসপাতাল কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন থেকে গুরুত্বপুর্ণ প্রায় ৪৮টি পদ শূন্য থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, দীর্ঘদিন থেকে কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক পদে ৪ জনের মধ্যে ২ জন কর্মরত, ২টি পদ শূন্য। ৯ জন ডাক্তারের মধ্যে ৩টি পদ শূন্যে। তার মধ্যে ডাঃ গোলাম কবির কানাইঘাট উপজেলার গাছবাড়ী এলাকার নারাইনপুর গ্রামের বাসিন্ধা। তিনি ২০১১ সাল থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। আয়া ২ জনের মধ্যে ১ জনের পদ শূন্য। নিরাপত্তাকর্মী ২ জনের মধ্যে ১ জনের পদ শূন্য। বাবুর্চি ২ জনের মধ্যে ১ জনের পদ শূন্য। মালির ১টি পদ শূন্য। হাসপাতালের ঝাড়–দার বা সুইপার ৫ জনের মধ্যে ৪ জনের পদ শূন্য। উক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধিনে ১৬ জন ডাক্তারের মধ্যে ৯ জনের পদ শূণ্যে রয়েছে। এছাড়া ২য় শ্রেণীর ১৪টি পদের মধ্যে ৭টি পদ শূন্য। ৩য় শ্রেণীর ১০৫টি পদের মধ্যে ২০টি পদ শূন্য। ৪র্থ শ্রেনীর ১৯ পদের মধ্যে ১০টি পদ শূন্য। সবমিলিয়ে ১৫৪টি পদের মধ্যে ৪৮টি পদ শূন্য রয়েছে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, হাসপাতালের নালা নর্দমা আর্বজনায় পরিপূর্ণ। ময়লা আর্বজনার কারণে দুর্গন্ধ পরিলক্ষিত হয়। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতাল ৫০ শয্যায় রুপান্তরের কাজ চলছে। রোগীদেরকে বাহির থেকে ঔষধ কিনে আনতে হয়। এছাড়া ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে হর হামেশা রোগী ভর্তি থাকেন। পুরুষ, মহিলা, শিশু ৩টি ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি করা হয়। খাবারের মান গুনগত না হওয়ায় রোগীরা বাহির থেকে খাবারের ব্যবস্থা করেন। ওয়ার্ডে বেড বিছানার স্বল্পতা। ইর্মারজেন্সীতে মেডিকেল ডাক্তার না থাকায় ৩ ধাপে ২৪ ঘন্টা কোম্পাউন্ডার, আয়া, ওয়ার্ড বয় ও ইউপি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে লোকজন এনে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। হাসপাতালের আউট ডোরে ২টি পুরুষ টয়লেট থাকলেও তা স্থায়ী ভাবে তালাবদ্ধ থাকে। হাসপাতালে ৩টি এম্বুলেন্সের মধ্যে ২টি নষ্ট ১টি দিয়ে রোগী বহনের কাজ চলছে।
কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ শরফুদ্দিন নাহিদ বলেন, “জনবল স্বল্পতার কারণে অনেকটা জোড়াতালী দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চালিয়ে যাাচ্ছি। আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল ডাক্তার, গাইনী ডাক্তার না থাকার কারণে রোগীদের সেবা প্রদান করা কষ্টর হচ্ছে। এমতাবস্থায় উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শূন্য পদে জনবল নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করা হয়েছে।”
Posted ৫:৪০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad