উচ্ছ্বাস থিয়েটার, শ্রীমঙ্গল এর ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দুইদিনব্যাপী নাট্য উৎসব ২০২৩ শুরু হয় ০৬ অক্টোবর মহসিন অডিটোরিয়ামে রাত ৭.০০ ঘটিকায়। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এর মধ্য দিয়ে নাট্য উৎসবের উদ্বোধন করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন শেষে উৎসব স্মরনিকার মোড়ক উন্মচোন করেন অতিথিবৃন্দ। এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ সভাপতি বুলবুল আনাম, জোটের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ চৌধুরী, শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হোসেন সোহেল, উদীচী শ্রীমঙ্গল শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিত রায় বিষু, শ্রীমঙ্গল থিয়েটারের বিপ্লবদেব আবু, গ্রীনলীফ ইনোভেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত দাশ। থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নয়ন মনি পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন গোবিন্দ রায় সুমন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বাস থিয়েটার, ভুলু সম্মাননা পদক ২০২৩ প্রদান করা হয় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন রুমিকে।
উচ্ছ্বাস থিয়েটার, শ্রীমঙ্গল এর ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দুইদিনব্যাপী নাট্য উৎসব ২৩ এর প্রথমদিন নাটক মঞ্চায়িত হয় উচ্ছ্বাস থিয়েটারের পরন্তপ। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দেন গোবিন্দ রায় সুমন। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হল ভর্তি দর্শক উপস্থিতিতে রাত ৭.৩০ এ শুরু হয় নাটক।শান্তিপূর্ণ বসবাসের সুসম্পর্কে জড়িত পৃথিবী নিজেদের বারবার দেখতে পায় যুদ্ধে। যুগে যুগে মানুষকে হাহাকারে নিমজ্জিত করে এই যুদ্ধযাত্রা। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা উপজীব্য করে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী কাহিনী উঠে এসেছে নাটকে । জীবন পাঁচালির আসরে জীবন পুড়ে তবু পুড়ে না প্রেম। পুড়া অকেজো শরীর নিয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে বহতা নদীতে নামে কাপন। জলের অতলে জল, শূন্যতার ভেতর শূন্যতা, আর তার গভীরে স্বাধীনতার আওয়াজ। এরকম বর্ণনাত্মক রীতিতে নাটকটির উপস্থাপনা বেশ নান্দনিক ও শিল্পমান সমৃদ্ধ। নাটকের আবহ সংগীত, পোশাক, আলোক পরিকল্পনা, প্রক্ষেপন ও অভিনয় দর্শকদের মন জয় করতে পেরেছে।
মধ্যরাতের নির্মম বাস্তবতা পথ পেরিয়ে স্বপ্নযাত্রার সুতীব্র ত্যাগ, দিগন্ত চেরা আর্তনাদে যুদ্ধের জোয়ারে যে দেশ ভাসে সে দৃশ্কল্পগুলো নাটকে যেন বাস্তব হয়ে ফূটে উঠেছে। স্থানীয় ঘটনা ও চরিত্রগুলো নাট্যকার বেশ চমৎকার ভঙ্গিতে তার রচনায় নিয়ে আসার চেষ্ঠা করেছেন।
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন নারায়ন দেবনাথ টুকু, টিপু সরকার, ইমন পাল, মৃত্তিকা দাশ আলো, আকাশ চন্দ, পূজা স্বর্নকার, দীপঙ্কর পাল, অর্পিতা কানু, অর্পা কানু, শান্ত স্বর্নকার, তৃষা বর্ধন, জয়ন্ত দাশ আকাশ, তপশ্রী দেবনাথ, মাহিমা আহমেদ চৌধুরী মুন্নী, স্বাগতা লক্ষী দত্ত, উর্মি পাল, সৈকত সূত্রধর জয়। নাটকটির মঞ্চ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন রাখাল বনিক, সুজিত রায়, অরূপ রায়, শাহজালাল জয়, অরুপ পাল, সুব্রত দাশ পুলক বর্ধন,নয়ন মনি পাল, পংকজ ভট্রাচার্য্য, বিশ্বজিৎ পাল।
০৭ অক্টোবর ২০২৩ উৎসবের ২য় দিন উচ্ছ্বাস থিয়েটার, ভুলু সম্মাননা পদক ২০২৩ প্রদান করা হয় অভিনেতা,সংগঠক নাট্যজন ঝুনা চৌধুরীকে। সম্মাননা পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন ঝুনা চৌধুরীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সংগঠনের সভাপতি গোবিন্দ রায় সুমন। ঝুনা চৌধুরীর হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন সাবেক স্বাস্থ্য পরিচালক, সিলেট বিভাগ ড. হরিপদ রায় এবং সর্বশেষ ঝুনা চৌধুরীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন।
এর পর মঞ্চায়িত হয় নাট্যকেন্দ্র ঢাকা প্রযোজনায় নাটক পুণ্যাহ। বদরুজ্জামান আলমগীরের রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ইউসুফ হাসান অর্ক। সভ্যতার আবর্তন-বিবর্তনের মোড়ে মোড়েই থমকে দাঁড়াতে হয়েছিল মানুষকে। ঈদিপাসের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিলও কোন পথে যাই। অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান মানুষকে পথ খুঁজে পেতে অবকাশ দিয়েছিলো বৈকি। কিন্তু সে পথ খুঁজতে গিয়ে আত্ম-বোধনের মুহূর্ত কি আমরা নিজেদেরকে দিয়েছিলাম? সময়ের সাথে পরিবর্তিত মূল্যবোধ বিবেচনায় পরিবর্তনের দূরবর্তী পরিণাম’ নিয়ে ভাবা হয়েছে কি আমাদের? সাম্প্রতিক পৃথিবীর যে বিপর্যস্তকাল, তা আমাদেরকে এমন কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন করেছিলো। সে প্রশ্ন গুলোনিয়ে শিল্পভাবনায় মঞ্চায়িত হয় পুণ্যাহ।
একটি বিধ্বস্ত জনপদ এখানে প্রেক্ষাপট মাত্র। তারই বিবৃতিমূলক কাহিনী বয়ানে নাট্যকার যেমন তার চরিত্র-চিত্রণ, দ্বাম্ভিকতা ইত্যাদির নানা উদ্ভাস রচনা করেছেন, তেমনি একটি সহজ প্রতিভঙ্গিতে নিরাভরণ ক্যানভাসে পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-ভুল ইত্যাদি ধারণা সম্পর্কে দরদিয়া অভিব্যক্তি নাটকটির নির্মাণ প্রয়াসে নির্দেশকের নৈপুন প্রর্দশিত হয় সমস্ত নাটক জুড়ে।
এ প্রযোজনায় গীত ও বর্ণনা শুধু দৃশ্য গ্রন্থনের জন্য নয়, বরং গীতপ্রিয় বাঙালি জাতির আবেগের শাশ্বত অভিব্যক্তিকে শ্রদ্ধায় রেখে ত্রিমাত্রিক পটে গীতময় কাব্যিকতা রচনার উদ্দেশ্যে প্রযুক্ত। দর্শকের কল্পনায় দৃশ্যময়তা, হৃদয়ে আবেগ ও বৌদ্ধিকতায় মানবিকতা প্রত্যাশা খুঁজে পাওয়া যায় নাটকে।
নাটটিতে অভিনয় শিল্পী হিসেবে কাজ করেন ঝুনা চৌধুরী, ইকবাল বাবু, ইউসুফ হাসান অর্ক, শেখ মাহবুবুর রহমান, খন্দকার সাজিয়া আফরিন, রাম কৃষ্ণ মিত্র হিমেল, সাইফুল ইসলাম সরকার, হাবিব মাসুদ, নূর এ আলম নয়ন, সংগীতা চৌধুরী, ইবতেসাম মাহমুদ শ্যামা, মনামী ইসলাম কনক, শহিদুল্লাহ সবুজ, কৌশিক বিশ্বাস, সাজিদ উচ্ছাস, তন্ময় আশরাফ, এস আই রাজ, ইফাত আরা, নারিন আফরোজ লিনসা, ঐন্দ্রিলা মজুমদার, ফারহান রুমি, রাজীব আহমেদ, প্রশান্ত স্বর্ণকার, নির্ঝর অধিকার।
নাটক দেখতে আসা দর্শকেদের উপস্থিতি ছিল চোখে পরার মতো। হল ভর্তি দর্শক ১ ঘন্টা ৫০ মিনিটের নাটক উপভোগ করেছেন নিরবতার মধ্য দিয়ে। উচ্ছ্বাস থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নয়ন মনি পাল জানান, টিকেট কিনে নাটক দেখতে আসা বিপুল দর্শকের উপস্থিতি আমাদের থিয়েটার চর্চাকে উৎসাহ যোগায় এবং থিয়েটারের প্রতি আমাদের দায়বোধ কে আরো বাড়িয়ে তুলে।
Posted ৯:৫২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৩
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad