জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া : হাকালুকি হাওরে পাখি শুমারিতে মহাবিপন্ন প্রজাতির পাখি বেয়ারার ভূঁতিহাঁসসহ বিপন্নপ্রায় ছয় প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা গেছে। শুমারিতে সর্বমোট ৫৩ প্রজাতির ৪০, ১২৬ টি জলচর পাখি মিলেছে। কিন্তু বার্ড রিং পরানো অতিথি পাখির সন্ধান না পাওয়া গেলেও বেড়েছে পাখির সংখ্যা।
গতিবিধি পর্যবেক্ষণে হাওরে রিং পরানো ৩৩ প্রজাতির যে ৩৭০টি পাখিকে বার্ড রিংগিং (পাখির পায়ে রিং) লাগানো হয়েছিল, এবার তার একটিরও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এমনকি ২০১০ সালে যে ১৬টি পাখির গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছিল, ওই পাখি গুলোরও আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২০১৯ সালে ৫১ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৯৩১টি জলচর পাখির দেখা মিললেও এ বছর তার থেকে দুই হাজার ১৯৫টি পাখি বেশি এসেছে। এ ছাড়া গত বছর ৫১ প্রজাতির পাখির দেখা মিললেও এবার খোঁজ পাওয়া গেছে ৫৩ প্রজাতির।
এবার হাকালুকির চকিয়া বিলে পাঁচ হাজার ৪৩০, চাতলা বিলে পাঁচ হাজার ১৪০, ফুট বিলে চার হাজার ৯৮৩ এবং বালিজুরীতে তিন হাজার ৩০৫ প্রজাতির পাখির খোঁজ পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে ছয় হাজার পিয়ং হাঁস (গ্যাডওয়াল) পাওয়া যায়। হাকালুকি হাওরে পাখি শুমারি শেষে এ তথ্য ওঠে আসে।
এদিকে ২০১৫ সালের ১৮ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি হাকালুকি হাওরে ৩৩ প্রজাতির ৩৭০টি পাখির পায়ে যে রিং লাগানো হয়েছিল, ২০১০ সালের মার্চে যে ১৬টি পাখির গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার এবং ৩৪টি পাখির পায়ে রিং লাগানো হয়, সেসব পাখির খোঁজ এবার পেয়েছেন কি না প্রশ্নের জবাবে বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, বার্ড রিংগিং (পাখির পায়ে রিং) লাগানো হয়েছিল এমন একটি পাখিরও সন্ধান পাওয়া যায়নি। কেন সন্ধান পাওয়া যায়নি— প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা বলা মুশকিল। এ ছাড়া ২০১০ সালে যে ১৬টি পাখির গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছিল, সেই পাখিগুলো ২০১১ সাল পর্যন্ত আমাদের মনিটরিংয়ে ছিল। এর পর থেকে ওই পাখিগুলোর আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের আয়োজনে দুই দিনের জলচর পাখি শুমারিতে অংশ নেন বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক ও পল থম্পসনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্যদের একটি দল। বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, হাকালুকিতের এবার বিপন্ন ও প্রায় সংকটাপন্ন ৬ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে। এর মধ্যে বিশ্বে মহাবিপন্ন পাখির একটি হলো বেয়ারের ভূঁতিহাঁস।
ধারণা করা হচ্ছে সারা বিশ্বে ১শ’ থেকে দেড়শটি ভূতিহাঁসের অস্তিত্ব রয়েছে। দেশের একমাত্র হাকালুকিতে এই পাখির দেখা মিলেছে এবার। এই পাখি দেশে আর কোথাও দেখা যায়না। কিন্তু হাকালুকিতে বিষটোপসহ পাখি শিকারিদের বিভিন্ন নিধনযজ্ঞের কারণে অন্যান্য পাখির মতো ভূঁতিহাঁসও হুমকির সম্মুখীন। এদের নিরাপদ আবাস ও বিচরণের ব্যবস্থার মাধ্যমে এই পাখি সংরক্ষণ করা সম্ভব। এছাড়াও হাওরের ফুট বিলে প্রথমবারের মত ৩টি মেটে রাজহাঁসের দেখা মিলেছে। এগুলো মূলত সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে বিচরণ করে।
ইনাম আল হক আরও জানান, শুমারিতে সর্বমোট ৫৩ প্রজাতির ৪০হাজার ১২৬ টি জলচর পাখি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চকিয়া বিলে সর্বোচ্চ ৫৪৩০টি, চাতলা বিলে ৫১৪৭টি পাখি পাওয়ায় যায়। শুমারিতে বিশ্ব সংকটাপন্ন বেয়ারার ভূঁতিহাঁস ও বিপন্ন প্রায় মরচেরঙ ভূতিহাঁস, ফুলুরি-হাঁস, কালামাথা-কাস্তেচড়া উত্তুরে-টিটি, উদয়ী-গয়ারসহ এই ছয় প্রজাতির জলচর পাখি দেখা যায়।
গত কয়েক বছর থেকে হাকালুকি হাওরটি অরক্ষিত থাকায় অবাধে শিকারীরা বিষটোপ ও বন্দুক দিয়ে পাখি শিকার করছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। অবিলম্বে হাওরকে পরিকল্পনার আওতায় এনে আবারও অতিথি পাখির অভয়াশ্রম করার দাবী জানান তিনি।
Posted ৬:৪২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad