মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

কানাইঘাটের গ্রামীন জনপদের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা : দেখার যেন কেউ নেই

আলিম উদ্দিন, কানাইঘাট থেকে :   রবিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯     406 ভিউ
কানাইঘাটের গ্রামীন জনপদের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা : দেখার যেন কেউ নেই

কানাইঘাট উপজেলার গ্রামীন জনপদের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা : রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা দেখলে মনে হয় এ যেন দেখার কেউ। উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের মতো কানাইঘাট পৌরসভার রাস্তাগুলোর অবস্থা প্রায় একই রকম। বিশেষ করে উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নে আজ পর্যন্ত কোন পাকা রাস্তাঘাট নেই। লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির উত্তরে সীমান্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্য- আর পুর্ব সীমান্তে ভারতের আসাম রাজ্য। দক্ষিনে সুরমা নদী ও উত্তরে লোভা নদী এরই মধ্যে উক্ত ইউনিয়নের জনসাধারনের বসবাস। এ যেন দ্বীপ অঞ্চল বলে মনে হয় অনেকেই। যে এলাকায় আজ পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য গড়ে উঠেনি পাকা রাস্তাঘাট। অতচ দেশের বৃহৎ একটি কোয়ারী রয়েছে লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির ভুখন্ড জুড়ে। এছাড়া পেট্রোবাংলা, বালু মহাল, সামাজিক বনায়ন, ফিসারিজ প্রকল্প ও ফরমূলের বাগান সহ রয়েছে অনেক কিছু উক্ত ইউপিতে।

স্থানীয় জনসাধারনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, উক্ত মমতাজগঞ্জ-লোহাজুরী রাস্তার মধ্যখানে “কাউয়া ছড়া” গ্রামের রিং কালভার্টটি ভেঙে গেছে কয়েকদিন পূর্বে। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ কওে বলেন, এলাকার জনপ্রতিনিধিদের (ইউপি সদস্য থেকে সংসদ সদস্য পর্যন্ত) কারো সময় নেই ভেঙে যাওয়া কালভার্টটি দেখার মত। এতে মতাজগঞ্জ-লোহাজুরীর উক্ত কাঁচা রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রতিদিন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শত শত ছাত্র/ছাত্রীরা পায়ে হেটে উক্ত রাস্তাদিয়ে যাতায়াত করে। এছাড়া উক্ত রাস্তা দিয়ে সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি ও পুলিশ চোরাচালান অভিযান পরিচালনা করে। স্থানীয় জনসাধারনের দাবী ইউনিয়নের মানুষ আজ সব দিক দিয়ে বঞ্চিত। এই এলাকায় সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম মাধ্যম পাথর কুয়ারি থাকা সত্ত্বেও এলাকাটি বার বার বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এদিকে মুলাগুল এলাকার বাসিন্ধা আব্দুর রহমান জীবন বলেন, আমরা আমাদের ইউনিয়নের পক্ষথেকে সরকারের দায়িত্বরত উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি দয়া করে এই ইউনিয়নকে বৈষম্যের চোখে দেখবেন না এবং আমাদের প্রাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না। এলাকার সাধারণ মানুষের দাবী এবং প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধী করে দ্রুত “কাউয়া ছড়ায়” রাস্তায় একটি ব্রীজ নিমার্ণ সহ পিছিয়ে পড়া সব ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জোর দাবী জানান তিনি।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কানাইঘাট-শাহবাগ, কানাইঘাট-চতুল, কানাইঘাট-সুরইঘাট, কানাইঘাট-গাছবাড়ী, কানাইঘাট-ভবাণীগঞ্জ, সুরইঘাট-চতুল, দলইর মাটি-লোভারমূখ, সড়কের বাজার-দর্পনগর, বাংলাবাজার-জয়পুর, সুরইঘাট-মুলাগুল রাস্তা, কানাইঘাট-দুর্লভপুর, কানাইঘাট-মনসুরিয়া সড়ক সম্প্রতি সংস্কার হলেও বর্তমানে আবার উক্ত রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পুরো উপজেলার গ্রামীন ও ইউনিয়ন সড়কগুলোতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন সড়কের প্রতিটি খানাখন্দে ভরপুর হয়ে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। আর শতাধিক গ্রামীন রাস্তার বেহাল অবস্থার ফলে জনদুর্ভোগের শেষ নেই। খানাখন্দে ভরা এসব রাস্তা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত উপজেলা সদরে যাতায়াত করছেন পথচারী ও যানবাহন চালকরা। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে রাস্তার অধিকাংশ জায়গায় পিচ, পাথর ও খোয়া উঠে মাটি বের হয়ে রাস্তায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এইসব রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে বেশিরভাগ বিকল হয়ে পড়ছে। শুকè মৌসুমে ধূলো-বালির আস্তরণে ঢাকা পড়ছে রাস্তার আশেপাশের বাড়িগুলো। আর বর্ষায় কাদা মাটি আর পানিতে গর্ত ভরে হয়ে উঠে কৃষি জমি। ফলে আধাঘন্টার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে দুই/তিন ঘন্টায়। সময় অপচয় হওয়ার পাশাপাশি বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীদের। অথচ দেখে বোঝার উপায় নেই, একসময় পিচের আস্তরণে ঢাকা ছিল রাস্তা গুলো। বিশেষ করে মুলাগুল-কাড়াবাল্লা রাস্তা, মন্তাজগঞ্জ-লোহাজোরী রাস্তা, ছতিপুর-কাড়াবাল্লা-দনা রাস্তার পাকাকরণ হলেই লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির জনসাধারণের দুর্ভোগ অনেকটা কমে আসবে বলে জানান স্থানীয় সচেতন মহল। এলাকাবাসী জানান, কানাইঘাট উপজেলার গ্রামীন রাস্তাগুলো বছরের পর বছর ভাঙ্গাচোড়া থাকলেও সেটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। গত বন্যা ও চলতি বর্ষায় রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়লেও তা সংস্কারে কর্তৃপক্ষ একটুও নজর দেয়নি। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকার মানুষ তথা স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, এসব সড়কের নির্মাণকাজের গুনগত মান নিম্নমানের হওয়ায় মাত্র এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে জনদূর্ভোগও ক্রমেই বাড়তে থাকে। এ থেকে উত্তরণের নেই কোন উপায়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, সিলেট-০৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেন, আমি বিগত নির্বাচনের সময় উপজেলার সকল রাস্তাঘাট দেখেছি। বিশেষ করে লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির জনসাধারনের ভাগ্যে আজও পাকা রাস্তা ও ব্রীজ পার হয়ে উপজেলা সদরে কিংবা জেলা শহরে যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। তাই আমি ওয়াদা করেছিলাম লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির লোভানদীর উপর ব্রীজ, আটগ্রাম-কাড়াবাল্লা ব্রীজ, মন্তাজগঞ্জ-দর্পনগর ব্রীজ সহ অনেক রাস্তাঘাট তৈরি করে দেওয়ার। তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমার নির্বাচনী এলাকার সব ক’টি রাস্তা পাকাকরণ করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের একটি দুর্বল দিক হচ্ছে কোন কাজের ক্ষেত্রে গুনগত মান ঠিক থাকেনা। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় খুব অল্প সময়ে রাস্তা ভেঙ্গে যায়। তাছাড়া যে রাস্তায় ছোট ছোট গাড়ি চলাচল করার কথা সে রাস্তায় চলে ভারী যানবাহন। ইট, পাথর ও বালু নিয়ে বড় বড় ট্রাক ঢুকে পড়ে গ্রামীন রাস্তায়। এ কারণে খুব দ্রুত রাস্তাগুলো ভেঙ্গে যায়। তিনি বলেন, এসব বিষয় আমাদের মাথায় রেখেই আমরা গ্রামীন রাস্তা সহ সকল রাস্তার পাকাকরণের কাজ সমাপ্ত করবো।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:৫৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com