রাজনগর প্রতিনিধি:- মাসুম আহমদের (১৪) কাছে মাত্র ১২’শ টাকা পাওনা ছিল তার দূরসম্পর্কের চাচা সালমান আহমদ (২১)। এই টাকা দিতে পারছিলো না মাসুম। তাই মাসুম ও সালমান মিলে পরিকল্পনা করে, অপহরণ নাটক সাজিয়ে মাসুমের মায়ের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে হাতিয়ে নিবে বড় অঙ্কের টাকা। পরে তাদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিবে। এই উদ্দেশ্যে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার কুলাউড়া উপজেলার সাব্বির আহমদ (২২) নামে একজনের কাছ থেকে পুরোনো একটি মোবাইল ফোন কিনে তারা। একটি দোকান থেকে কৌশলে সিম কার্ডও কিনে। পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে চুল কাটতে যাচ্ছে বলে বেরিয়ে যায় মাসুম আহমদ। বাড়িতে না ফেরায় রাত ১০টার দিকে পরিবারের লোকজন আশেপাশে ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খুঁজাখুঁজি করেন। রাত ১ টার দিকে একটি নাম্বার থেকে তার মায়ের ফোনে কল করে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবী করে একজন। টাকা না দিলে মাসুমকে মেরে ফেলবে এবং থানা পুলিশ না করতে নিষেধ করে দেয়া হয়। এঘটনায় গত বুধবার মাসুমের চাচা রাজনগর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।
এদিকে নিজে সাথে না গিয়ে মাসুমকে আরেকজনের সাথে সিলেটে পাঠিয়ে দেয় সালমান। মাসুমের পরিবারের কাছাকাছি থেকে পুলিশের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে সে। পুলিশের গতিবিধি জানাতে থাকে মাসুম ও তার সাথে থাকে একজনকে। বৃহস্পতিবার আরেকবার কল করে মাসুমের মায়ের কাছে জানতে চাওয়া হয় টাকা রেডি হয়েছে কিনা? তিনি এতো টাকা নেই বললে “যত টাকা ম্যানেজ হয়েছে” তা নিয়ে সিলেটে যেতে বলে অপরপ্রান্তে থাকা ব্যাক্তি। এঘটনায় পুলিশের সন্দেহ হয়। মুক্তিপণ চাওয়া নাম্বারটি শনাক্ত করতে তৎপরতা শুরু করে রাজনগর থানার পুলিশ। একে একে মোবাইল ফোন বিক্রেতা ও সিম কার্ড বিক্রেতাকে আটক করে জানা যায় কিছু তথ্য। সালমানসহ কয়েকজন মিলে সোমবার আলাদা আলাদা স্থান থেকে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড কিনেছে বলে স্বীকার করে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সালমান আহমদ (২১) ও আব্দুস সামাদ (২০) নামে দুইজনকে আটক করা হয়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা অসংলগ্ন উত্তর দেয়। অন্যদিকে সাথের সঙ্গীরা পুলিশের কাছে আটক হয়েছে জেনে বেরিয়ে আসে মাসুম। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সে ১০ টাকা রিক্সা ভাড়া করে সিলেট শহরের হুমায়ুন রশিদ চত্ত্বরে একটি দোকানে যায়। দোকানদারের ফোন থেকে তার মাকে কল করে দোকানদারকে দিয়ে মাসুম নিজের অবস্থান জানায়। পরে ওই দোকানদার ফোন করে বিষয়টি রাজনগর থানার ওসি আবুল হাসিম ও এসআই বিনয় ভূষণ চক্রবর্তীকে জানান। মাসুমের মাও বিষয়টি পুলিশকে অভহিত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
অপহরণ নাটক সাজানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজনগর সদর ইউনিয়নের ভুজবল গ্রামের প্রবাসী সুলেমান মিয়া ওরফে তাজিল মিয়ার ছেলে হাজী গজনফর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র ভিকটিম মাসুম আহমদ (১৪), একই গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে সালমান আহমদ (২১) ও কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া এলাকার মৃত নয়াব উল্ল্যার ছেলে আব্দুস সামাদকে (২০) আটক দেখানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টতা না থাকায় সাব্বির আহমদ সহ তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রাজনগর থানার ওসি আবুল হাসিম বলেন, সালমান মাসুমের কাছে ১২০০ টাকা পাওনা ছিল। ওই টাকা দিতে না পারায় দুজনে মিলে পরিকল্পনা করে অপহরণ নাটক সাজায়। তাদের পরিকল্পনায় আরো কয়েকজন জড়িত রয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
Posted ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad