রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

শায়েস্তাগঞ্জ পৌর মেয়র ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দুদুকে

রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯     320 ভিউ
শায়েস্তাগঞ্জ পৌর মেয়র ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দুদুকে

মোঃ আব্দুর রকিব, শায়েস্তাগঞ্জ  সংবাদদাতা : শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার অর্জিত অর্থ আত্মসাৎ, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়ম-দূর্নীতি ও অসদাচরনের কারণে মেয়র মোঃ ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন পৌরসভার ৭ কাউন্সিলর। অভিযোগকারী কাউন্সিলররা হলেন, জালাল উদ্দিন মোহন, মাসুদউজ্জামান মাসুক, খায়রুল আলম, আব্দুল জলিল, শিউলী বেগম, মোঃ নওয়ার আলী, মোহাম্মদ তাহির মিয়া খান। ৯ সেপ্টেম্বর তাদের স্বাক্ষরিত অভিযোগ দুদক চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, আমরা নিন্মে সাক্ষরকারীগন শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়া ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ ইং দুইটি অর্থ বছরের এডিপি রবাদ্দ ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা একত্রিত করে বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার করেন এবং এর মধ্য হতে কিছু ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবে কোন কাজ না করেই সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। যাহা আইন এবং নিয়মের পরিপন্থি।

চলমান প্রজেক্ট এমজিএসপি-১, ডাব্লিউ ৪ প্রকল্পের (প্রায় ৩৭ কোটি টাকা) আওতায় পরিচালিত পুরাতন প্রায় ১ হাজার ফুট ড্রেনেজের উপরি কাঠামো সাধারণ আস্তর দিয়ে দায়সারা ভাবে নির্মাণ করে ঠিকাদার থেকে বিপুল অংকের টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন। এমনকি এমজিএসপির চুড়ান্ত ডিজাইন মেয়র আর্থিক সুবিধা অর্জনের জন্য ন্যাক্কারজনক ভাবে পরিবর্তন এবং নিন্মমানের কাজ সম্পাদন করছেন। উক্ত প্রকল্পের মেইন্টেনেন্স বরাদ্দের বিপুল অংকের টাকা নামমাত্র কাজ করে আত্মসাত করেন। এছাড়াও শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার রোড রোলর, ড্রাম ট্রাক, গার্ভেজ ট্রাক, পানি সরবরাহ ট্রাক এর নিয়মিত ভাড়া হতে অর্জিত অর্থ প্রায় কোটি টাকা পৌর কোষাগারে জমা না দিয়ে বেআইনী ভাবে আত্মসাৎ করেন।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়া কর্তৃক টমটম (অটোবাইক) এর বার্ষিক নাম্বার প্লেইট বরাদ্দের নামে রাস্তায় চলাচল রত যেকোন টমটমকে যে কোন অজুহাতে আটক করে ৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে বছরে ১৫ লক্ষ টাকা পৌর সভার কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাত করেন। পৌরসভার মেয়র হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নাগরিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স মনগড়া মতো বাড়িয়ে দেন এক্ষেত্রে অর্জিত টাকা পৌরসভার একাউন্টে জমা না দিয়ে অধিকাংশ টাকা নিজের মতো করে আত্মসাৎ করেন। আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে যেনতেন ভাবে নক্সা আনুমোদনের নামে বিপুল পরিমানের অর্জিত অর্থ পৌর কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের অধিনে অবস্থিত রেলওয়ের পরিত্যক্ত ভূমিতে (হাইকোর্টে রিট মোকদ্দমাধীণ) পৌর মার্কেট নামীয় সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক দোকানঘর নির্মাণ করে তা হতে দোকানঘর বরাদ্দের নামে সিকিউরিটি-সেলামি বাবদ প্রায় ৫ কোটি টাকা ও প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ প্রায় ৫ লাখ টাকা পৌরসভার নামে আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা না দিয়ে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। ইহা সর্বজনবিদিত এবং ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত সংবাদ দেশের প্রতিটি ইলেক্টনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে।

মোঃ ছালেক মিয়া পৌর মেয়র হওয়ার পর হতে নিজে ধরাকে সরাজ্ঞান করে সমাজের গণ্য মান্য ব্যক্তিগণের সহিত অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। দাপ্তরিক প্রয়োজনে কোন নাগরিক পৌরপরিষদে গেলে মেয়র ছালেক মিয়া তাদের সাথে মারাত্মক খারাপ আচরণ করে থাকেন। যাহা পৌর পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার সামিল।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজে অন্যায় ভাবে হস্তক্ষেপ করার কারনে কোনো নামিদামি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় কাজ নিতে আগ্রহ বোধ করেন না। ফলে ছালেক মিয়া নিজের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের ভাংগিয়ে নিয়ে টেন্ডারকৃত কাজ দায়সারা ভাবে সম্পন্ন করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন পুরাতন রাস্তা সংস্কারের নামে তিনি অবৈধ ভাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও অস্থায়ী ভিত্তিতে অপ্রয়োজনীয় ৩৮ জন জনবল নিয়োগ করে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার করে থাকেন। ইহাতে পৌরসভা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ও পৌর পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।

ব্যক্ত থাকা আবশ্যক যে, ছালেক মিয়া পৈত্রিক ভাবে প্রাপ্ত মাত্র ২ শতাংশ ভূমির মালিক। তিনি মেয়র হওয়ার পর মাত্র তিন বছরের মাথায় নামে বেনামে স্থাবর অস্থাবর প্রায় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। যা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এতে পৌরসভার ভাবমূর্তি নষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিতেও পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। মেয়র ছালেক মিয়ার উপরুক্ত কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে গেলে কাউন্সিলরদের অপমান করেন কোন কোন সময় অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করার মাধ্যমে অফিস থেকে বের করে দেন।

মেয়র ছালেক মিয়া শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে প্রতি মাসে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাত করে থাকেন। এ বিষয়ে আমরা কাউন্সিলরগণ প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি কঠোর কন্ঠে বলেন, “পৌরসভার মালিক আমি, যা ইচ্ছা তাই করব। ইচ্ছা হলে অফিসে আসো নয়তোবা পদত্যাগ কর।”

উপরুক্ত বিষয়ের আলোকে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অসদাচরণের অভিযোগে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে কাউন্সিলরগন দুদক চেয়ারম্যানের বরাবরে আবেদন করেন।

সদয়অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, এমপি মোঃ জাহির আহমেদ, এল জি ই ডির প্রধান প্রকৌশলী, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও এমজিএসপি এর প্রকল্প পরিচালককে প্রদান করা হয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:২৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com