মোঃ আব্দুর রকিব, হবিগঞ্জ থেকে : নরসুন্দর বা নাপিত এমন এক শ্রেণীর পেশাজীবি মানুষ যারা অন্যসব মানুষের চুল,দাড়ি, গোফ ইত্যাদির অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তন করে থাকেন। এই অতিরিক্ত কেশ কর্তনের মাধ্যমে তারা অন্য মানুষের অবয়বে আমূল পরিবর্তন করার মাধ্যমে আকর্ষনীয় এবং নান্দনিকতার প্রকাশ ঘটান। এ নরসুন্দর বাংলাদেশের সর্বত্রই বসবাস করেন, এদের সামাজিক অবস্থানও মিশ্র ধরনের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নরসুন্দরেরা একটি সম্প্রদায় ভুক্ত মানুষ, এতেই তারা গর্ব বোধ করে থাকেন। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নরসুন্দরের পেশা গ্রহন করছেন স্বচ্ছন্দে।
প্রচলিত ভাষায় নাপিতরা যেখানে চুল ছাঁটেন/কাটেন সেটাকে সাধারণত হেয়ার কাটিং সেলুন অথবা শুধু সেলুনও বলা হয়ে থাকে। সকল নাপিতরাই চুলে একটি সাধারণ ছাঁট দিয়ে থাকেন, তবে অনেক নরসুন্দর তার সেলুনে বিভিন্ন স্টাইলে অথবা বাহারী চুলের ছাঁট দিয়ে থাকেন। এখন সেলুনগুলোতে কেশ কাটার নতুন যন্ত্র ট্রিমারের ব্যবহার শুরু হওয়ায় বাহারী নামের হেয়ার কাটিং চালু হয়েছে।
আবার নিম্নআয়ের মানুষের কেশ কর্তনের জন্য দেশের সর্বত্রই পল্লীবাংলার ঐতিহ্য ফুটপাতে বা খোলা জায়গায়/গাছের ছায়ায় স্বল্পমূল্যে একই সেবা দিচ্ছেন নরসুন্দরেরা। তবে জরুরি প্রয়োজনে বয়স্ক এবং রুগ্নদের চুল দাড়ি কাটতে অনেক নাপিত বাড়িতে গিয়েও চুল ছেঁটে দেন। বিশেষ করে বিয়ের পূর্বদিন বরের চুল ছাঁটতে বাড়িতে নাপিত আনতেই হয়।
বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি পালনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। রাষ্ট্র আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মেনে খোলা/বন্ধ রাখা হয়েছে। একই কারণে হেয়ার কাটিং সেলুনগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখলেও যথারীতি গ্রাহক পাওয়া যাচ্ছেনা। স্বাস্থ্যবিধি সচেতন অনেকেই সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ করতে সেলুনে যাওয়া আবশ্যক হলেও যাচ্ছেন না।
কেশ মুন্ডনকৃত জনৈক ব্যক্তির সহিত কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় তিনি সেলুনে না গিয়ে বাড়িতে নিজেরাই চুল দাড়ি কাটার কাজটি সেরে ফেলেন। যে কারনে সেলুনে গ্রাহক না থাকায় উপজেলার নরসুন্দরেরা উপার্জনহীন হয়ে অভাব অনটনে জীবন যাপনে অনেকটা বাধ্য হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জীবনধারা। এর সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে হিমসিম খাচ্ছেন নিয়ন্ত্রকরা। এরই প্রভাবে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নরসুন্দরেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সব জায়গাতেই সেলুন ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে।
তথ্যে জানা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার নতুন ব্রীজ, পুরানবাজার, দাউদনগর বাজার, আলীগঞ্জ বাজার এলাকাতে থাকা পুরুষ কেশ কর্তনের দোকানগুলো মূলত অচল রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অবস্থিত বাহারী নামের সেলুনগুলোতে চুল, দাড়িকাটা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সেলুন ব্যবসায়ীরা।
সেলুন ব্যবসায়ী কমল শীল বলেন, মহামারি প্রাদুর্ভাবের পূর্বে যা আয় হতো তা দিয়ে দোকানভাড়া কর্মচারিদের বেতন পরিশোধ করে সংসার চালানোর পর কিছু সঞ্চয়ও করতে পারতাম। আর এখন দোকান বন্ধ থাকায় নিজের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। ফুটপাতের অস্থায়ী সেলুন ব্যবসায়ী কাজল শীল, নারায়ণ শীল জানান, করোনাভাইরাস মহামারীর সংক্রমণের ভয়ে সেলুনে চুল, দাড়ি কাটতে আসছেন না লোকজন। তবে মাঝে মাঝে চুল কাটার জন্য গ্রামে লোকজনের বাড়িতে যাওয়ার ডাক আসে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সেলুন ব্যবসার সহিত যুক্ত মালিক কর্মচারীরা জানান, এ অপ্রত্যাশিত সঙ্কটকালে আমাদের অবস্থা ভাল না, হঠাৎ করে অন্য কোন পেশায়ও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না তাই অনেক দুঃখ কষ্টে দিন যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা কোন সরকারি বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছি না।
Posted ৮:৪৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২০ জুন ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad