পি সি দাশ, শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা হাওররক্ষা বাঁধের কাজের বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) এখনও গঠন করা হয় নি। বাঁধের কাজ শুরুর নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়েছে নামে মাত্র কাজ। উপজেলায় কিছু মধ্যস্বত্বভোগী নামধারী টাউট পিআইসি গঠনের ধান্দায় সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক নেতারা। পিআইসিতে যুক্ত করার জন্য অপেক্ষাকৃত দুর্বল মানুষ খোঁজতে গিয়েই পিআইসি গঠন বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করেন কৃষক আন্দোলনে জড়িতরা।
হাওররক্ষা বাঁধের নীতিমালায় ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বাঁধের কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা সমাপ্তির কথা উল্লেখ আছে। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত গঠন করা হয়নি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। এজন্য শাল্লায় দুশ্চিন্তায় আছেন হাওরের কৃষকরা।
কৃষক নেতারা জানিয়েছেন, নীতিমালায় বাঁধের পাশের সুবিধাভোগী কৃষকদের দিয়ে পিআইসির কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও শাল্লাসহ জেলার কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধি পিআইসি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ব্যস্ত। এই কারণে বিলম্ব হচ্ছে পিআইসি গঠন। এসব মধ্যস্বত্বভোগীরা পিআইসির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আগেই কিছু টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার কমিটিতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল মানুষকে যুক্ত করারও চেষ্টা আছে তাদের। যাতে এদের নাম সর্বস্বভাবে কমিটিতে থাকে। টাকাসহ সবকিছুই তাদের (প্রভাবশালীদের) নিয়ন্ত্রণে থাকার কৌশল এটি।
শাল্লায় ১৫৬ টি পিআইসি গঠন হবার কথা। এনিয়ে বেশ কয়েকটি পিআইসিতে নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ পরেছে। অভিযোগেে লিখা আছে ভান্ডাবিল হাওরের ১৭ নং পিআইসিতে আবেদনকৃত রন্টু দাস কিসের বিনিময়ে ১৮ নং পিআইসিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। যেখানে রন্টু দাসে ১ শতক জমি নাই বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। শুধু তাই নয় এমপির প্রতিনিধি সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা সুবল দাসের বিরুদ্ধে ও পিআইসিতে অর্থ লেনদেনর অভিযোগ করা হয়েছে শাল্লায়। কমিটির সদস্য ভাইস চেয়ারম্যান দীপু রঞ্জন দাস নাকি রন্টু দাসের আত্মীয় হওয়ায় ১৭ থেকে প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিক ভাবে ১৮নং পিআইসিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পিআইসি গঠনের মোটা অংকের অর্থের লেনদেনের বিনিময় হয়েছে বলে হবিবপুর গ্রামের অভিযোগকারী নিতেশ পুরকায়স্থ জানান ।
উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের নিশি দাস দরিদ্র কৃষক জানালেন, এক জনপ্রতিনিধিকে পিআইসিতে ঢুকানোর জন্য টাকা দিয়ে ছিল তার এক বন্ধু পরে পিআইসি দিতে না পেরে টাকা ফেরত দিয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি পিআইসি তিনি পাবেন কি না ।
একইভাবে এই উপজেলার কাশিপুর, মৌরাপুর, নিয়ামতপুর সহ একাধিক গ্রামের দরিদ্র কৃষকরা পিআইসিতে নাম ঢুকানোর জন্য ধান্দাবাজদের খুঁজছেন। উপজেলার হবিবপুর গ্রামের কৃষক নীতিশ পুরকায়স্থ রোববার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট করা আবেদনে উল্লেখ করেছেন, তিনি উপজেলার ভান্ডা বিল হাওরপাড়ের একজন কৃষক। পিআইসিতে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তিনি জেনেছেন, ওখানে তাকে ঢুকানো হয় নি। এক শতাংশ জমির মালিকও নয়, এমন ব্যক্তিকে ঢুকানো হয়েছে পিআইসিতে।
একইভাবে ভান্ডা বিলের পাড়ের জাতগাঁও গ্রামের আরেক কৃষক এনাম চৌধুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট করা আবেদনে উল্লেখ করেছেন, হাওরে জমি থাকায় তিনি পিআইসিতে থাকার আবেদন করেছিলেন। এলাকার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস এক লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা না দেওয়ায় তাকে পিআইসিতে রাখা হয় নি।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা আল মুক্তাদীর হোসেন বলেন, নীতিশ পুরকায়স্থ এবং এনাম চৌধুরী’র অভিযোগ পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাল্লার মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মে বিলম্বিত হচ্ছে বাঁধের কাজের পিআইসি গঠন। এ কারণে ক্ষুব্ধ হাওরের কৃষক। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক মাস গত হতে চলেছে, কিন্তু কাজ শুরুর খবর নেই। বন্যার কারণে এমনিতেই ক্ষেত লাগানো পিছিয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ফসল মৌসুমে অকাল বন্যারও ভয় থাকে। যদি ২০১৭ সালের মতো পাহাড়ী ঢল নেমে আসে তখন হাওর রক্ষা করবে কে?
জেলা কৃষক লীগের সদস্য সচিব বিন্দু তালুকদার বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে বাঁধের কাজে ধান্দাবাজি করার কোন সুযোগ নেই। কৃষক লীগের কেউ এমন কাজে নিয়োজিত হলে, দলীয় ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, পিআইসি গঠনে অনিয়ম বা অর্থ লেনদেনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পিআইসি গঠনের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কাজ আদায়ে সহযোগিতার জন্য এটি করা হয়। তিনি জানান, আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যেই পিআইসি গঠনের কাজ শেষ হয়ে যাবে।