মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

দিরাই শাল্লা সড়ক নিয়ে হাওরবাসীর হতাশা

পি সি দাশ পীযূষ, শাল্লা, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:   শুক্রবার, ০২ আগস্ট ২০১৯     918 ভিউ
দিরাই শাল্লা সড়ক নিয়ে হাওরবাসীর হতাশা

ছবি- সিলেটের জনপদ

সুনামগঞ্জের শাল্লা’র প্রায় দুই লাখ মানুষের স্বপ্নের দিরাই শাল্লা সড়কের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাওরবাসী হতাশায় দিন গুনছে। কবে কোন দিন এ সড়কে সারাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবেন এই এলাকার মানুষ তা কেউ জানেনা।

২০১১ সালে প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মহোদয় সড়কের কাজও শুরু করেছিলেন। ২০১৭ সালে শেষ হবার কথা ছিল সড়কের কাজ। প্রধানমন্ত্রী’র প্রতিশ্রুত এই সড়কটি’র এখনো বেহাল অবস্থা। নিয়োগকৃত ঠিকাদাররা ৮৮ কোটি টাকা বিল উত্তোলন করলেও যাতায়াত ভোগান্তি শেষ হয়নি শাল্লাবাসী’র। এই সড়কের কাজ শেষ হবে কী-না, কিংবা কবে শেষ হবে, এই নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শাল্লাবাসীসহ হাওর পাড়ের মানুষের।

দিরাই এবং শাল্লার দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রসর, রাজনৈতিক সচেতন এই উপজেলার প্রায় দুই লাখ বাসিন্দার প্রধান সমস্যা যাতায়াত ভোগান্তি। সুনামগঞ্জ থেকে দিরাই পর্যন্ত সড়ক রয়েছে। কিন্তু দিরাই থেকে শাল্লা’র ১৯ কিলোমিটার অংশে যোগাযোগ সড়ক স্থাপনের জন্য ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে এসেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন এই সড়ক নির্মাণ করে শাল্লাবাসী’র যোগাযোগ দুর্ভোগের অবসান ঘটানো হবে।

শাল্লা উপজেলার ঘুঙ্গিয়ারগাও গ্রামের ডা.মনোরঞ্জন সরকার (৭৯) বলেন, খুব স্বপ্ন ছিল এ সড়কে গাড়ি দিয়ে সিলেট, ঢাকা যাওয়া। এখন অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এজনমে আমার আশা পুরণ হবে। যেটুকু কাজ হয়েছিল সেটিও আফালে ভেঙে যাচ্ছে। শিক্ষক অনাদি তালুকদার, বলেন জন্মের পর থেকে দেখছি বর্ষায় নাও হেমন্তে পাও (পায়ে হেটে) যাতায়াত করছে। এদশা থেকে কবে যে মুক্তি পাব কে জানে।

শাল্লা থেকে সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে হেমন্তে ২২০ টাকা বর্ষায় ১৫০ থেকে ২৩০ টাকা খরচ হয়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার জন্য বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করছে শাল্লাসহ ভাটী এলাকার মানুষ ।

নির্বাচন আসলে বার বারই বলা হয়, এবার ভোট দিলে দিরাই-শাল্লার সড়ক হবে। কিন্তু মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণ হচ্ছে না, কবে পূরণ হবে তাও মানুষ জানে না।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী’র প্রতিশ্রুত এই প্রকল্পে বরাদ্দ হয় ১১৯ কোটি টাকা। ২০১১ সালে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে সড়কে কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ৮ বছরেও এই সড়কের কাজ শেষ হয়নি। সড়কের কাজ শেষ হতে না হতেই অনেক স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সড়কের স্লোপ ঠিকভাবে না হওয়ায় বেশিরভাগ অংশ সরু হয়ে গেছে। হাওরের ঢেউ থেকে সড়ক রক্ষা করার জন্য দেওয়া ব্লক অনেক স্থানেই ছুটে গেছে। সড়কের ছোট বড় ১১ টি সেতুর দুই পাশে মাটি পরেনি বুকার মত দাঁড়িয়ে আছে প্রত্যেকটি সেতু।

সড়কের বড় ভাঙন মাছুয়ারখাড়ায় এখন সেতু হবে না সড়ক হবে এই নিয়েও মতভিন্নতা রয়েছে।

সড়ক জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অমিয় চক্রবর্তী জানালেন, বিশেষজ্ঞরা হাইড্রোলজি-মরকোলজি সম্পন্ন করে মতামত দিয়েছেন মাছুয়ারখাড়ায় ১০৩ মিটার সেতু হবে। কিন্তু মাছুয়ারখাড়ার প্রস্ত প্রায় সাড়ে তিন’শ মিটার। ১০৩ মিটারের পরের অংশ ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর। ১০৩ মিটার সেতু করে, বাকী অংশ অ্যাপ্রোচ করে আটকানো অনেক কঠিন। সেতু করতে যা খরচ লাগবে, সড়ক করলে শুধু মাটির খরচই এর অর্ধেক লাগবে।

তিনি বললেন, উদগল হাওরের ফসল অকাল বন্যা থেকে রক্ষার জন্য গত দুই বছর এখানে যেভাবে হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধ হয়েছে, তা এখনও আছে। এই বাঁধ টিকিয়ে রাখার জন্য সড়ক ও জনপথ’এর পক্ষ থেকে দুই দিকের স্লোপে বস্তা দেওয়া হয়েছিল। বাঁধটির উপরের অংশ এখনো কমপক্ষে ১২ ফুট প্রশস্ত আছে।
আমার ব্যক্তিগত মত, এই বাঁধকে ২-৩ বছরে মাটি দিয়ে ১৬ ফুট প্রশস্ত করে, নীচে গার্ড ওয়াল নির্মাণ করে, স্লোপে ব্লক বিছিয়ে দিলেই সড়ক টিকে যাবে।
স্থানীয় সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এহসান চৌধুরী বলেন, মাছুয়ারখাড়ায় সেতু হলে উদগল হাওরের ফসল অকাল বন্যার কবল থেকে রক্ষা করা যাবে না। গত দুই বছরে দেওয়া বাঁধ এখনো (৮ জুলাই পর্যন্ত) টিকে আছে। ৫০-৬০ ফুট উঁচু এই বাঁধ রেখে সেতু করতে চাইলে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু বাঁধটি কাটতে দেবেন না এলাকাবাসী। সরেজমিনে এসে যে কেউ দেখে যেতে পারেন। এই বাঁধ জীব-বৈচিত্রের কিংবা হাওরের পানি প্রবাহের কোন ক্ষতি করছে না। এই বাঁধ না থাকলে ফসল মৌসুমে অকাল বন্যা হলে বরাম হাওর ডুবলে, বরাম হাওরের পানি মাছুয়ারখাড়া দিয়ে নেমে উদগল হাওরও ডুবে যায়।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ারুল আমিন বলেন, দিরাই-শাল্লা সড়কের দিরাই থেকে ৬ কিলোমিটার দূরেই বড় ভাঙন অংশ রয়েছে। এই ভাঙন অংশকে মাছুয়ারখাড়া বলা হয়। হাইড্রোলজি-মরকোলজি সম্পন্ন হয়েছে। ওখানে সেতু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেতু ও সড়কের কাজ শেষ করার জন্য প্রাক্কলন তৈরির কাজ চলছে। প্রাক্কলন প্রস্তুত করতে ৩-৪ মাস সময় লাগবে। এরপর অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এই বছরের শেষ নাগাদ দরপত্র প্রক্রিয়ায় হয়তো যাওয়া যাবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা বলেন, সড়কের হাইড্রোলজি-মরকোলজি’র কাজ করতে একবছর পার করলেন সংশ্লিষ্টরা। যা দু:খজনক। সড়কের কাজটি দ্রুত সমাপ্ত করার লক্ষে কাজ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:১০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ আগস্ট ২০১৯

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com