সুনামগঞ্জ জেলার ভারত মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত লাগোয়া একটি জনপদ তাহিরপুর। এখানকার মানুষের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম কয়লা কুড়ানো। তাঁরা যাদুকাটা নদীর স্রোতধারায় বালির সাথে মিশে থাকা কয়লা কুড়িয়ে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে স্রোতধারায় পানির সাথে কয়লা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ভারতীয় পাহাড় ধ্বসে নুড়ি বালির ভেসে আসা কয়লা যাদুকাটা নদীর স্বচ্ছ পানিতে দেখা যায়। বালি থেকে আলাদা করে সংগ্রহ করে স্থানীয় মহাজনদের কাছে প্রতি বস্তা ৩-৪ শত’ টাকায় বিক্রি করে থাকে । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার যাদুকাটা নদীর উৎসস্থল হতে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতিদিন লক্ষাধিক শ্রমিক পাথর, বালি ও কয়লা তুলে জীবিকা নির্বাহ করে।যাদের বেশির ভাগই নারী শ্রমিক।
এ নদীতে তাহিরপুরসহ পার্শ্ববর্তী জামালগঞ্জ ও বিস্বম্ভরপুর উপজেলার কয়েক হাজার শ্রমিক প্রতিদিন ভোর থেকে কয়লা কুড়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকে।এমন কি নদীর তীরবর্তী লাউড়েরগড়, ডালারপাড়, ছড়ারপাড়, পুরানলাউড়, মোকশেদপুর, মানিগাও, মাহারাম বড়গোপ, রাজারগা, জামবাক, কড়ইগড়া, চানপুর, রজনীলাইন, রাজাই, স্বরুপগঞ্জ, মাছিমপুর, চিনাকান্দি ও ছাতারকোনা গ্রামের নারী শ্রমীকরা দিন-রাত কয়লা সংগ্রহে নিয়োজিত থাকে।হতদরিদ্র এসকল নারীরা একসময় কাজের অভাবে অনাহারে দিনাতিপাত করতে হতো, তাদের অনেকেই আজ স্বাবলম্বী। এখন দৈনিক ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন তাঁরা।এছাড়া দক্ষ নারী শ্রমিকদের মহাজনরা অগ্রিম টাকা দিয়েও কয়লা ক্রয় করে থাকেন।
কয়লা সংগ্রহকারী নারী শ্রমিকরা জানান, অনেক শ্রমজীবী নারী কয়লা কুড়িয়ে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। যার ফলে তাদের ছেলে-মেয়েরা এখন স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করছে।
বিস্বম্ভরপুর উপজেলার স্বরুপগঞ্জ গ্রামের কয়লা শ্রমিক জান্নাত আরা বলেন, ‘আমি ও আমার ২ ছেলে মিলে ৬ মাস কয়লা তুলে বিক্রি করে ৩ লাখ টাকা আয় করেছি। সেই টাকায় দুই ছেলের বিয়ে, টিনের ঘর নির্মাণসহ গরু-ছাগল কিনে সুখে আছি।
যাদুকাটা বালু-পাথর সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, বালির সাথে মিশে থাকা কয়লা তুলে হাজার শ্রমিক বেঁচে আছে। আমরা তাদের সকল প্রকার সহযোগিতা করে আসছি।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, প্রবাহমান যাদুকাটা নদীতে স্রোতের বালির সাথে মিশে থাকা কয়লা ঠেলা জালিতে ছেঁকে প্রক্রিয়া শেষে মহানজনদের কাছে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা একটি অদ্ভুত ও কঠিন কাজ বঠে।তবু এলাকায় অন্য কোন কাজ না থাকায় আমার উপজেলার শ্রমজীবি লোকজন নদীর স্রোতের সাথে নিজেদের জীবনমান বদলে দেওয়ার কটিন শপথে আমার পরিষদের সক্রিয় সহযোগিতা থাকবে। কারন এ জনপদের শ্রমিকরাই আমাদের চালিকাশক্তি।
Posted ৫:০৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৮ আগস্ট ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad