সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সহ বিস্মম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত শনির হাওরের অবস্থান। তাহিরপুর অংশে জমির পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটি তাহিরপুর উপজেলার হাওর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলায়ও এই হাওরের বেশ কিছু জমিও রয়েছে।
শনির হাওরের চারদিকে এখন বিস্তৃত ধানক্ষেতে হাউয়ার ঢেউ। দৃষ্ঠি যেখানে যায় সেখানেই ধান আর ধান। কখনো কখনো কাল বৈশাখির চোখ রাঙানি আর শিলাবৃষ্ঠির ভয়ে আতঙ্কতি কৃষক। আকাশে কালো মেঘে দেখলেই কৃষকের মনে শংকা জেগে উঠে। মনে হয় এই বুজি হাওর ঘেঁষা মেঘালয় থেকে নেমে আসা আগ্রাসী ঢল এসে স্বপ্ন গুলোকে ভেঙ্গে চুড়ে দেবে। তাই বসে নেই কৃষক এমন কি পরিবারের মেয়ে ছেলেরাও।সবাই ধান কাটা, মাড়াই,ধান শুকানোও গোলায় উঠানো ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন সবাই।
সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের মতে শনির হাওরে আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৩০ হেক্টর জমি। হাইব্রিড, উফশি ও স্থানীয় জাতের ধানও চাষ করেছেন কৃষক। এই শনির হাওরে উৎপাদিত ধানের মূল্য প্রায় বর্তমান ধানের বাজার দর ২’শ কোটি টাকা। তাহিরপুরে শনির হাওরে ৬ হাজার, বিশ্বম্ভরপুরে ১ হাজার ৩০০ এবং জামালগঞ্জে ৬৪০ হেক্টর জমি রয়েছে। এছাড়া এই হাওরে সব মিলিয়ে আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৩০ হেক্টর বোরো জমি। গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি প্রায় ৪.০২ মে.টন চাল।
গত শনিবার দুপুরে তাহিরপুর এলাকার শনির হাওরের ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় দলে দলে ধান কাটছেন শ্রমিকরা। কৃষকরাও শ্রমিকদের কাজে সহযোগিতা করছেন । কলসী কাধে করে পানি এনে কৃষক দের খাওয়াচ্ছেন। বৃষ্ঠি বিহিন পাকাঁধানের ক্ষেতে বাউল আব্দুল করিম শাহ’র গান গেয়ে কেউবা মোবাইলে গান বাজিয়ে ধান কাটার শ্রমিকরা উল্লাস করে ধান কাটতে দেখা গেছে বৃহত্তর এই শনির হাওরে।
ভাটি তাহিরপুরের কৃষক শফিকুল ইসলাম (৫৫) এ বছর প্রায় ৬ একর জমিতে ধান লাগিয়েছেন। এখন ধান কাটছেন শ্রমিকরা। গত ৫ বছর ধরে তার ক্ষেতের ধান কেটে দিতে আসছেন একই উপজেলার রাজার গাও গ্রামের শ্রমিকরা। তিনি শ্রমিকদের নির্দেশনার সঙ্গে ধানির মুঠি টানার কাজও করছেন।
শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক গত ৪০ বছর ধরে শনির হাওরে ধান কাটছেন। তাকে তার পিতা এই হাওরে কিশোর বয়সে ধান কাটতে নিয়ে এসেছিলেন। এখন তিনি ও তার ছেলে আলমকেও ধান কাটতে নিয়ে এসেছেন।
একই এলাকার শ্রমিক নূর আলমও গত ২০ বছর ধরে ধান কাটতে আসছেন শনির হাওরে। শ্রমিকরা জানালেন, মওসুম ভালো হলে হাওরে ধান কাটতে পারলে অন্তত ৬ মাসের খোরাকি সংগ্রহ করেন তারা। তখন নিশ্চিন্তে বসে ঘরের ভাত খেতে পারেন। শ্রমিকরা জানালেন,৭ হিস্যায় ধান কাটেন তারা। প্রতিদিন প্রায় এক মনের কাছাকাছি ধান ভাগে পায় প্রতিজন শ্রমিক। এই হাওরের ধান কাটা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করেন তারা।
জমির মালিক আয়ূব আলী বলেন,শনির হাওর একদিকে যেমন আশির্বাদ অন্যদিকে অভিশাপেরও নাম। তবে গত দুই বছর কোন প্রকার সমস্যা ছাড়াই গোলায় ধান তুলতে পারছি আমরা সেই সাথে ছেলেমেয় নিয়ে ৩ বেলা খেয়ে পড়ে বেচে আছি। শিলা বৃষ্ঠি কিংবা আগাম পাহাড়ী ঢওে ফসল তলিয়ে গেলে আমাদেও কান্ন দেখার কেউ থাকেনা।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, মওসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফলন কিছুটা কম হলেও কাঙ্খিত উৎপাদন হয়েছে। আমাদের গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি প্রায় ৪.০২ মে.টন চাল। তিনি বলেন, শনির হাওর জেলার অন্যতম বড় হাওর। তিনটি উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত এই হাওরে এবার ধান ভালো হয়েছে। অর্ধেকের কাছাকাছি ধান ইতিমধ্যে কাটা হয়ে গেছে। চলতি মাসেই সব ধান কাটা শেষ হবে।
Posted ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad