আলম সাব্বির, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : তাহিরপুরে মেঘালয় পাহাড়ের পাদস্থিত সিমান্ত লাগোয়া নদীর নাম যাদুকাটা। যাদুকাটা নদীর দু’পাড়ে সিমান্ত কেন্দ্রিক গ্রাম সমুহের লোকজনের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস যাদুকাটা নদী।নদীতে মহাল না থাকায় সরকার রাজস্ব প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত থাকার অজুহাতে শ্রমিকদের পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশও বিজিবি প্রশাসন। সম্প্রতি সিমান্তের জিরো লাইন হতে নিরাপদ দুরুত্বে কয়লা উত্তোলনকে অনুমোদন দেওয়ায় আশার আলো জেগে উঠেছে নিরন্ন অসহায় খেটে খাওয়া পরিবার সমুহের।
সরেজমিনে কয়লা আহরনরত শ্রমিক, ব্যবসায়ীও এলাকার দায়িত্ব শীল ব্যাক্তিগনের সাথে কথা বলে জানা যায় ভারত মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তা পাহাড়ের বুক চিড়ে প্রবাহিত এ নদীতে প্রাকৃতিক ভাবেই অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বস বা কয়লার পাহাড় ধ্বসে নদীতে পানির ¯্রােতের সাথে বালিতে মিশে ভারত হতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ অংশে।
প্রতিবছর নদীতে পানি কমার সাথে সাথে কয়লা শ্রমিকরা নদীতে নামে কয়লা আহরণে।এসব শ্রমিকদের বেশির ভাগই নারী শ্রমিক। অইসব নারী শ্রমিকদের কারো স্বামী মারা গেছে নয়তো কেউ স্বামী পরিত্যাক্তা বা অসুস্থ তাই বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজনের মূখে দু মুঠো খাবার তুলে দিতে বেশির ভাগ নারীরাই নামে কষ্ঠকর এ কয়লা উত্তোলনের কাজে। তবে এ কয়লা উত্তোলনে সফলতার গল্পও রয়েছে অনেক।
বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়ের গড় গ্রামের সালেমা বেগম,নুরজাহান,আয়েশা,রহিমা বেগম জানান ”ফজরের নামাজের শেষে ঠ্যালা জাল,কোদাল,চালনী বেলচা ইত্যাদি নিয়ে নিয়ে তারা নামেন যাদুকাটা নদীতে। কোমর কিংবা বুক সমান পানিতে দাড়িয়ে ঠ্যালা জাল দিয়ে বালি মিশ্রিত কয়লা তুলে আবার নদী কিনারে গিয়ে পুনরায় বালি হতে কয়লাকে আলাদা করে বস্তায় ভরে মাহাজনদের কাছে বিক্রি করতে হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পযর্ন্ত কাজ করতে পারলে প্রতিজন নারী ২/৩ বস্তা কয়লা তুলতে পারে যার মুল্য দেন মহাজনরা প্রতি বস্তা ৩’শ থেকে ৩’শ ৫০ টাকা । এতে করে দৈনিক রোজগার হয় তাদের ৯’শ থেকে ১২’শ টাকা পর্যন্ত আবার অনেক নারী শ্রমিকরা ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫,শ টাকা পর্যন্ত বা এর বেশি রোজগার করার ক্ষমতা রয়েছে বলে জানান তারা।
শিমল তলা গ্রামের রতনা বেগম জানান ঘুম থাকি উঠি ভাত-ছালুন রাইন্দা খাইয়া, জাল বেলচা, কোদাল লইয়া গাঙ্গে(নদীতে) আই কয়লা তুলতে। সকাল থাকি শুরু করি কয়লা তোলার কাম বেইল্লালা (বিকাল) পর্যন্ত হাঁটু ও কোমর পানিতে ভিজে বালি থেকে কয়লা বাইর করে বস্তায় ভরে পাড়ের নিয়ে এসে বিক্রি করি।’ তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের সুন্দরপাহাড়ি গ্রামের আছমা খাতুন এভাবেই নদী থেকে কয়লা সংগ্রহের কথা বলছিলেন্ প্রেতিবেদককে।
শুধু মাত্র নারীরাই নয় যাদুকাটা নদীতে ভেসে আসা কয়লা কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে দেখা যায় পুরুষ শ্রমিকদেরও।প্রতিদিন সকালে নৌকা, কোদাল, বেলচা, জাল নিয়ে নদীর তল দেশ থেকে বালি থেকে কয়লা পৃথক করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন একই রকম তারাও।
বড়গোপটিলা গ্রামের নাজমা বেগম বলেন, তার পরিবারের ৫ সদস্য সবাই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নদীতে কয়লা সংগ্রহের কাজ করেন। এর আগে তাদের দিন সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে কাটতো। এখন পরিবারে অভাব-অনটন নেই।
স্থানীয় কয়লা ব্যবসায়ী তারা মিয়া,গফ্ফার মিয়া জানান,নদী থেকে কয়লা সংগ্রহ করার ফলে আমরাক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও শ্রমিক উভয়ে কর্মসংস্থান হয়েছে।এলাকার ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা কয়লা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন করোনার পর এলাকার হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন।যাদুকাটা নদীতে কয়লা সংগ্রহ করে ব্যাপক ভাবে কাজের সুযোগ হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, করোনা কালে শ্রমজীবী মানুষ বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।এতে যেন কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর রাখছে প্রশাসন।
Posted ১২:১২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad