মখলিছ মিয়া, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) থেকে : সবাইকে কাদিঁয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে চলে গেছে ছোট্ট ছোঁয়া। পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ট্রেন দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও একমাত্র ভাইকে ঢাকা পঙ্গু হাসপালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেখেই আদিবা আক্তার ছোঁয়ার (২) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মা-বাবার কলিজার টুকরা আদরের ধন ছোট্ট ছোঁয়া। এক মুহুর্তের জন্যও মা-বাবাকে ছেড়ে থাকতো না, ট্রেন দুর্ঘটনার আগেও ছিল মা আর বাবার কোলে। মা-বাবাকে সব সময় চোখের সামনের রাখত। মা কিংবা বাবাকে সামনে না দেখলে জুড়ে দিতো কান্না। অথচ সামান্য সময়ের ব্যবধানে এখন আর আব্বু-আম্মুর জন্য ছোঁয়া মনির কণ্ঠে কোনো আকুতি নেই! ঘাতক ট্রেন কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণ।
ছোট্ট ছোঁয়ার লাশ হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পৌছার পর থেকেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ছোয়াঁ মনিকে দেখতে গ্রামের বাড়ীতে হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমায়। এসময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণ হয়। মা-বাবার অবর্তমানে মঙ্গলবার রাত ১০টায় নানাবাড়ি সৈদ্যাটুলা গ্রামে ছোয়ার লাশ নানা মাফিক উল্লার তত্তাবধানেই দাফন করা হয়। ছোয়াঁর লাশ দেখে উপস্থিত সবাইকেই কাঁদতে দেখা যায়। মানুষের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
আদিবা আক্তার ছোঁয়ার নানা মাফিক উল্লা (৭০) এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমার ঔরসে কোনো সন্তান নেই। সন্তানের অভাবে যখন আমার স্ত্রী দিশেহারা তখনই ছোয়ার মা নাজমা বেগমকে দত্তক আনি। ছোট বেলায় দত্তক আনার পর থেকে একদিনের জন্য ওকে বুঝতে দেই নাই যে নাজমা আমাদের ঔরসের মেয়ে না। ভিটে বাড়ি সব হারিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকি। অভাব অনটন সত্তে¡ও মেয়ের কোনো চাহিদাকেই অপূর্ণ রাখি নাই। তার মুখের দিকে তাকিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছিলাম। তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছর পূর্বে উপজেলার তাম্বুলিটুলা গ্রামের সুহেল মিয়ার সাথে নাজমার বিয়ে দেই। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখেই ছিল আমার মেয়ে। জীবিকার তাগিদে জামাই সোহেল ও আমার মেয়ে দুইজন চট্রাগ্রাম একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। সেখানে যেতেই স্বামী সন্তান নিয়ে উদয়ন ট্রেনে যাত্রা করে ছিল তারা। কিন্তু পথিমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যায় আমার ছোট্ট নানা ভাই ছোয়াঁ। দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বাবা,মা ও একমাত্র ভাইয়ের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার সময় লাশ দাফনের জন্য বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিহত আদিবার পরিবারের কাছে তুলে দেন ইউএনও মোঃ মামুন খন্দকার।
অন্যদিকে মদনমুরত গ্রামের নিহত আল আমিন এর পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ১৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। এসময় ইউএনও মোঃ মামুন খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
Posted ১১:০১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad