মো. ফরহাদ হোসেন, রাজনগর (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের রাজনগরে অজ্ঞাত তরুণীকে হত্যা করে লাশ গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। সম্পূর্ণ ক্লুলেস এই মামলার রহস্য উন্মোচন করে দুই নারীসহ ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত নিহত ওই তরুণীর ঠিকানা জানতে পারেনি পুলিশ। গত সোমবার দুপুরে এনিয়ে প্রেসব্রিফিং করেছেন জেলা পুলিশের এসপি ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার)।
প্রেসব্রিফ্রিংয়ে জানানো হয়, গত ১২ জুন সকাল সাড়ে ৮ টায় উপজেলার উত্তরভাগ ইউপিস্থ চাঁনভাগ দক্ষিন টিলা গ্রামের মুকুল মিয়ার আকাশী বাগানে আকাশী গাছ বাগানের একটি গাছে অজ্ঞাতনামা মহিলার (১৮-২০) মৃতদেহ ঝুলে আছে এমন সংবাদ পায় রাজনগর থানার পুলিশ। এই সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ মৌলভীবাজার পৌরসভার মাধ্যমে দাফন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে রাজনগর থানার ওসি আবুল হাসিম, ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম, এসআই আবুল কালাম চৌধুরীসহ অন্যান্যদের নিয়ে গঠিত তদন্ত টিম ব্যাপক তদন্তে নামে।
বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের পর গত ৪ জুলাই উপজেলার গয়াসপুর গ্রামের মৃত তরমুজ মিয়ার ছেলে জমশেদ মিয়াকে (৫২) সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। কৌশলী জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামী জমশেদ মিয়া স্বীকার করে যে, গত ১০ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার সময় সিলেট জেলার হুমায়ুন রশিদ চত্ত্বর হতে শিপন ও সালমা নামে দুইজনের সাথে দুই হাজার টাকা চুক্তিতে অসামাজিক কাজ করতে একরাতের জন্য অজ্ঞাতনামা ওই নারীকে বাদশা খাঁ, সিএনজি চালক জাহাঙ্গীর আলম, জমসেদ মিয়া ও শেখ হুমায়ুন আহমদ মিলে অটোরিক্সা (সিএনজি) যোগে সিলেট থেকে রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নস্থ এনা বেগম ওরফে গোলাপী নামে এক নারীর বাড়ীতে নিয়ে আসে। তারা গোলাপীর সাথে আলাপ আলোচনা করে তার পরিত্যক্ত ঘরে তারা অজ্ঞাতনামা নারীকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষন করে। ঐ রাতে অজ্ঞাতনামা মহিলাকে খাওয়া খরচ বাবদ ২০০ টাকা দিয়ে বাদশা খাঁ অজ্ঞাতনামা মহিলাকে গোলাপীর হেফাজতে রেখে তারা চলে যায়।
পরদিন সন্ধ্যার পর আসামী বাদশা খাঁ, জাহাঙ্গীর আলম, জমসেদ মিয়া ও শেখ হুমায়ুন আহমদ আবারো গোলাপীর ঘরে গিয়ে অজ্ঞাতনামা নারীকে আরো একরাত তাদের সাথে রাত্রিযাপন করার জন্য বললে সে তাদের কথায় রাজী না হওয়ায় একপর্যায়ে তাকে সিলেটের শিপন ও সালমার নিকট পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ৪ জন মিলে ঘর হতে বের করে পার্শ্ববর্তী টিলার বাশঁ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যায়।
ওই চারজন সেখানে জোরপূর্বক পূণরায় শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলে অজ্ঞাতনামা নারী তাতে রাজী না হয়ে চিৎকার করতে গেলে জাহাঙ্গীর আলম ওই নারীর বুকের উপর বসে গলায় চেপে শ্বাসরোধ করে, জমসেদ মিয়া তার পায়ে চেপে ধরে এবং হুমায়ুন ও বাদশা তার হাত ও মুখে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তারা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ওই নারীর লাশ তার সাথে থাকা ওড়না দিয়ে গলায় বেঁধে আকাশী গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে।
জমসেদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলার চাঁনভাগ গ্রামের হোসেন খাঁ’র ছেলে বাদশা খাঁ (৩২), মজিদ মিয়ার স্ত্রী এনা বেগম ওরফে গোলাপী (৩৫), বড়দল গ্রামের মৃত শেখ আবুল কালাম আজাদের ছেলে শেখ হুমায়ুন আহমদকে (২৫) গ্রেফতার করে। পরে টেংরা ইউনিয়নের সৈয়দনগর (ভাঙ্গারহাট) গ্রামের ইলাছ মিয়ার ছেলে শিপন মিয়া (৩০) ও গোলাপগঞ্জ থানার রনিখই গ্রামের আব্দুল কাদিরের স্ত্রী সালমা বেগমকে (২৫) সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। সালমা বেগমকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, অজ্ঞাতনামা মৃত নারীর ছদ্মনাম সুমি বেগম। তবে তার কোন ঠিকানা সে জানে না এবং জনৈক রুকশানা বেগম ওই নারীকে সালমার নিকট দিয়েছিল।
পুলিশ জানায়, রুকশানা নামের ওই মহিলার খোঁজ করা হচ্ছে। তার খোঁজ পেলে হয়তো মৃত ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এঘটনায় জড়িত উপজেলার চাঁনভাগ গ্রামের মনির মিয়ার ছেলে সিএনজি চালক জাহাঙ্গীর আলম (২৭) পলাতক রয়েছে।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসিম বলেন, নিহতের নাম সুমি বলা হলেও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কয়েক হাত বদল হয়ে ওই নারী এখানে আসায় বিষয়টি জটিল হয়ে গেছে। তবে আমরা তার নামপরিচয় নিশ্চিত হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পলাতক আসামীকে গ্রেফতারেও পুলিশ তৎপর রয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ৬ আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
Posted ২:২৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ জুলাই ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad