বুধবার ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নবীগঞ্জের জায়েদ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, ঘাতকের স্বীকারোক্তিতে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন

শুক্রবার, ২০ মার্চ ২০২০     144 ভিউ
নবীগঞ্জের জায়েদ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, ঘাতকের স্বীকারোক্তিতে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন

মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ : নবীগঞ্জের পাহাড়পুর গ্রামের জায়েদ মিয়া (২২) নামে ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনার ১৫ দিনের মাথায় রহস্য উদঘাটন করেছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ।

ব্যবসায়ী জায়েদ মিয়ার প্রেম সংক্রান্ত ঘটনা, বিয়ে ভঙ্গ ও পাওনা টাকা আত্মসাত করতেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিং করে এমন তথ্য জানিয়েছেন নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরী। তিনি গতকাল শুক্রবার বিকেলে নবীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গনে প্রেস বিফ্রিং করে গ্রেফতারকৃত আসামী মোহাম্মদ আলী রুবেলের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি মোতাবেক এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান- সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের দুস্তপুর গ্রামের জনৈকা হ্যাপি আক্তার সুখীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমেরে সম্পর্ক ছিল একই এলাকার ইচপুর গ্রামের ধনাই মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ আলী রুবেলের। প্রেম চলাকালীন সময়ে তার খালাতো বোনের বাড়ী নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামে বেড়াতে আসে হ্যাপি আক্তার সুখী’র খালাতো বোন রত্মা বেগম এর স্বামী রিপন মিয়া।

শ্যালিকা হ্যাপীকে নিয়ে দুলাভাই রিপন মিয়া বাড়ীতে বসে গল্প করার সময় ওই বাড়ীতে যায় রিপনের বন্ধু জায়েদ মিয়া। এ সময় সুখীকে একনজর দেখেই ভালো লেগে যায় জায়েদের। এক পর্যায়ে মোহাম্মদ আলী রুবেলের প্রেমিকা সুখীর সাথে নতুন করে প্রেমের গভীর সর্ম্পক গড়ে উঠে জায়েদের। এ অবস্থায় জায়েদ এর সাথে হ্যাপি আক্তার সুখী’র প্রেমের সম্পর্ক হওয়ার কারণে মোহাম্মদ আলী রুবেলের সঙ্গে ২ বছরের পুরনো প্রেমের সর্ম্পক ভেঙ্গে যায়।

অপর দিকে রিপন মিয়া, রনি মিয়া এবং জায়েদ মিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব থাকার কারণে জায়েদ-সুখীর প্রেমের সম্পর্কটি জানা ছিল। সকল বন্ধু মিলে জায়েদ আহমদ এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আড্ডা দিত। হ্যাপি আক্তার সুখী ও জায়েদ মিয়ার প্রেমের সম্পর্কের সুযোগে জায়েদ এর নিকট থেকে প্রায় ১০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল রিপন মিয়া।

এরপর তাদের বন্ধু রনি মিয়াও জায়েদ এর কাছ থেকে টাকা ধার নেয়। এদিকে জায়েদের সাথে প্রেমিকা সুখীর নতুন প্রেমের সম্পর্কটি মেনে নিতে পারেনি সাবেক প্রেমিক মোহাম্মদ আলী রুবেল। অন্যদিকে এতো দিনে জায়েদ-সুখীর প্রেমের সর্ম্পকটি গড়িয়েছে বিবাহে। উভয় পরিবারের সম্মতিতে জায়েদ-সুখীর বিবাহের দিন ধার্য্য হওয়ার কথা ছিল গত ০৬ মার্চ তারিখে।

অপর দিকে ঘটনার কিছুদিন পূর্বে জায়েদ মিয়া তার বন্ধু রিপন মিয়া ও রনি মিয়ার নিকট তার পাওনা টাকা চাইলে উভয়ের সাথেই তার বাক বিতন্ডা হয়। এ অবস্থায় সুযোগ খুঁজে মোহাম্মদ আলী রুবেল। এক পর্যায়ে জায়েদ মিয়ার বন্ধু রিপন মিয়া ও রনি মিয়ার সাথে পরিচয় হয় রুবেলের। রিপন মিয়া সুখীর খালাতো বোনের জামাই হওয়ায় রিপনের সাথে সুখীর সাবেক প্রেমিক মোহাম্মদ আলী রুবেলের সাথে পরিচয়টা অতি সহজে হয়ে যায়।

এরই মধ্যে পরস্পর যোগসাজসে রুবেলের প্রেমের ব্যর্থতা, জায়েদ-সুখী বিবাহ ভঙ্গ করতে এবং জায়েদের পাওনা টাকা আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যেই রুবেল-রিপন-রণি মিলে জায়েদ মিয়াকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরে তারা ইমোর মধ্যে একে অপরের সাথে চ্যাটিং এর মাধ্যমে জায়েদকে হত্যা করার মাস্টার প্লান করে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন গত ৪ মার্চ শেরপুর বাজারে বিকেলে বসে ওই রাতে জায়েদ মিয়াকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার পথে হত্যা করা হবে বলে পরিকল্পনা চুড়ান্ত করে।

এদিকে রাত ১১ টার দিকে জায়েদকে হত্যার করার বিবিয়ানা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্টের সড়কের মজলিশপুর নামক স্থানে অবস্থান নেয় রুবেল-রিপন-রণি। প্রতিদিনের ন্যায় শেরপুর বাজার থেকে দোকান বন্ধ করে জায়েদ মোটর সাইকেল যোগে রওয়ানা দেয়। জায়েদ মিয়া ওই স্থানে আসা মাত্রই মোটর সাইকেল দাড় করিয়ে জায়েদের মাথায় জিআর পাইপ দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাত করে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে। প্রথমে লাশটিকে পাশের একটি জমিতে পেলে দেয় এবং মোটর সাইকেলটি আরো কিছু দুরে রেখে আসে ঘাতকরা।

এরপর থেকেই জায়েদের কোন খোঁজ পাচ্ছিলেন না পরিবারের লোকজন। ঘটনার পর দিন ৫ মার্চ সকালে পাহাড়পুর গ্রামের আঃ লতিফের ছেলে ট্রাক্টর চালক সাইফুর রহমান জায়েদের ছোট ভাই আমজদ মিয়াকে ফোন করে জানায়- উল্লেখিত স্থানে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় জায়েদের লাশ পরে আছে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় ৬ মার্চ জায়েদের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-০৫) দায়ের করেন।

এরপরই রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা চালায় পুলিশ। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় থানার এস আই সমীরণ চন্দ্র দাশকে। একপর্যায়ে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ। গত ১৮ মার্চ বুধবার মোহাম্মদ আলী রুবেলকে তার নিজ বাড়ী থেকে আটক করা হলে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং তার সহযোগী রিপন ও রণির নাম বলে পুলিশের কাছে।

গত বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের বিজ্ঞ আদালতের বিচারক তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয় ঘাতক মোহাম্মদ আলী রুবেল। এ ছাড়াও রিপন মিয়া ও রণি মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুর রহমান, ওসি (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৫১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২০ মার্চ ২০২০

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com