আল মামুন, জকিগঞ্জ প্রতিনিধি : প্রথমে তেমন পাত্তা দেয়নি কেউ। আরে দুত কিসের কী? আমাদের কিছুই হবে না। এমন ভাব ছিল অনেকের মনে। ৬ এপ্রিল থেকে সবাই নড়ে উঠেছেন। সবার মধ্যেই একটা চাপা আতঙ্ক। কী হচ্ছে, কী হবে—মানুষের চোখে মুখে এমন জিজ্ঞাসা ফুটে ওঠছে। অজানা ভয়ে শঙ্কিত মানুষ। লক্ষ্য করা যাচ্ছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা।
এই ভয় করোনাভাইরাসের। সিলেট বিভাগের দুটি জেলায় করোনাভাইরাসের রোগী সনাক্ত হওয়ার পর মানুষের ভয় বেড়েছে কয়েক গুণ। জানা গেছে, গত রবিবার সিলেটে এক ব্যক্তির এবং মৌলভীবাজারের এক ব্যক্তির করোনাভাইরাস পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তবে মৌলভীবাজারের ওই ব্যক্তি করোনার উপসর্গ নিয়ে আগেই মারা যান।
গত রবিবার রাতে এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ভয়ের কুয়াশা যেন নেমে আসে সিলেটজুড়ে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রবিবার দিনেও সাধারণ মানুষ সরকারি নির্দেশনা পুরোপুরি না মেনে ঘরের বাইরে বের হচ্ছিলেন, জড়ো হচ্ছিলেন। কিন্তু কাল সোমবার অনেকটাই ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। এ দিন করোনার ভয়ে ঘরের বাইরে মানুষের আনাগোনা ছিল একেবারে কম। এতোদিন সিলেটে করোনাক্রান্ত কেউ ধরা না পড়ায় মানুষের মধ্যে কিছুটা অসচেতনতা ছিল, সেটাও এখন উবে গেছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছে মানুষ।
এদিকে, সিলেট এবং মৌলভীবাজারের যে দুই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অন্য কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে তাদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সেই ‘অন্য আক্রান্ত ব্যক্তি’ কে বা কারা, তা জানা যাচ্ছে না। ফলে ওই আক্রান্ত এক বা একাধিক ব্যক্তি অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াচ্ছেন কিনা, এ নিয়ে উৎকন্ঠায় সবাই।
পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সম্মিলিত প্রয়াসের সাথে এবার মানুষের সচেতনতা যুক্ত হয়েছে। নিজেদের স্বার্থেই মানুষ বুঝতে শুরু করেছে ঘরে থাকার বিষয়টি। তবে দায়িত্বশীলা মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, এখন ঘরে থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনো যাবে না। ঘরে থেকে সুষম খাবার খাওয়া ও বেশি করে পানি পান করতে হবে। মনোবল হারানো চলবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, করোনাক্রান্ত হলেই যে মারা যাবেন, এমনটা নয়। আক্রান্ত হওয়ার পর অসংখ্য মানুষ সুস্থ হচ্ছেন। তাই আতঙ্কিত হওয়া চলবে না। সচেতন থাকতে হবে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজন কুমার সিংহ বলেন, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ, স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা তখনই শতভাগ বাস্তবায়িত হবে যখন মানুষ নিজে থেকে জেগে উঠবে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি সবার জানা। প্রয়োজন এখন ঘরে থাকা। কাঙ্খিত উপস্থিতি এখনো আমরা দেখিনি। রোগটাকে বাঘের মতো ভয় পেতে হবে।
জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, মানুষ পরিস্থিতি দেখতে ঘর থেকে বের হয়। এর কোনো মানে নেই। সকলে নিরাপদ থাকার চেষ্টা করতে হবে। ব্যাংক, স্থানীয় গ্রামীণ বাজারে জনসমাগম এখনো অাশঙ্কাজনক। যা কাম্য নয়।
পৌর মেয়র হাজী মো.খলিল উদ্দিন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ বিতরণের আহবান জানিয়েছেন। খাদ্যের সংকট মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে মানবিকতার ডাকে এগিয়ে আসার জন্য তিনি বিত্তবান ও চিত্তবানদের প্রতি আহবান জানান।
Posted ১০:০২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ এপ্রিল ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad