আল মামুন, (জকিগঞ্জ) সিলেট প্রতিনিধি: বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের ভীতি ও পৌষের কনকনে শীতের মাঝেও সীমান্ত উপজেলা জকিগঞ্জের পৌর এলাকায় এখন বইছে নির্বাচনী উত্তাপ। এ উত্তাপের উষ্ণতায় সিক্ত হচ্ছেন পুরো উপজেলাবাসী। তৃতীয় ধাপে আগামী ৩০ জানুয়ারি জকিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন।
এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ কাউন্সিলর পদে ৩৩ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৯ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার ফয়সল কাদের। ৩ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাইকালে রিটার্নিং অফিসার বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন হিরার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। বিষয়টির আপিল শুনানী আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হবে।
এ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. খলিল উদ্দিন, বিএনপির ধানের শীষে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মেয়র ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ, জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মেয়র আব্দুল মালেক ফারুক। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের পদত্যাগকারী আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক ফারুক আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহের সমর্থিত কাজী মোহাম্মদ হিফজুর রহমান, স্থানীয় সোনাসার বাংলা সমিতির সভাপতি মো. জাফরুল ইসলাম।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শাদমান সাকিব জানান, এবারের নির্বাচনে ২৪টি গ্রামের মোট ভোটার রয়েছেন ১২৩৩৮। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১০ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্ধ ১১ জানুয়ারি এবং ভোট গ্রহণ ৩০ জানুয়ারি।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী, সমর্থক, দলীয় নেতাকর্মী ও শোভার্থীরা কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখনো প্রতীক না পেলেও যে যার মত করে প্রচার চালাচ্ছেন। যাচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি, দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। অতীতের ভুলত্রুটির ক্ষমাও চাচ্ছেন কেউ কেউ। জকিগঞ্জ বাজার, অফিস পাড়া, চায়ের দোকান, ক্লাব, সমিতি, পাড়া, মহল্লা সর্বত্র এখন আলোচনার বিষয় পৌর নির্বাচন। কে কত ভোট পাবেন তা নিয়ে হচ্ছে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ। কে যোগ্য কে অযোগ্য তা নিয়েও হচ্ছে আলোচনা।
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জকিগঞ্জ পৌরসভা দীর্ঘ ২১ বছরেও পৌরবাসির প্রত্যাশাকে স্পর্শ করতে পারেনি। এখনও পৌরসভার নিজস্ব কোন ভবন নেই। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াদ আব্দুস সামাদ আজাদ জকিগঞ্জ পৌরসভার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও আজ অবধি তা ভিত্তিপ্রস্তরেই আটকে আছে। পৌর এলাকায় নেই পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। জলাবদ্ধতা জকিগঞ্জ পৌরসভার অন্যতম প্রধান সমস্যা। ময়লা আবর্জনা এবং নোংরা পরিবেশ, মশা-মাছির উপদ্রব এখানে নিত্যদিনের সমস্যা। নামে মাত্র দু’চারটি সড়ক বাতি থাকলেও অধিকাংশ ওয়ার্ডেই সড়ক বাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর পর ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয় জকিগঞ্জ।
পৌরসভায় এখনও চালু হয়নি ডিজিটাল তথ্য ও সেবা কেন্দ্র। বিগত দিনে সেবার মান না বাড়ায় ঠিক মত টেক্স আদায় করতে পারেননি কোন মেয়রই। ফলে ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভার শ্রেণি পরিবর্তন না হওয়ায় এখনও বাড়েনি বরাদ্ধও। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে পৌরসভার কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। পৌরসভা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে জকিগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে তা আজও পুরণ হয়নি। এডভোকেট কাওছার রশিদ বাহার বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনসেবা ও উন্নয়নের পরিবর্তে নিজেদের ভাগ্য বদলের চিন্তাই করেছেন বেশি। ফলে পৌরবাসী হতাশ ও ক্ষুব্ধ। পৌরবাসীর প্রত্যাশা আসন্ন নির্বাচনে একজন যোগ্য ও দক্ষ প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। যিনি পৌরবাসীর আশা আকাক্সক্ষা পুরণে সচেষ্ট থাকবেন।
Posted ২:৫২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২১
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad