খোয়াই চৌধুরী, জকিগঞ্জ : যে সব মাদ্রাসার সুনাম-সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে এমনই একটি মাদ্রাসা হচ্ছে সিলেটের জকিগঞ্জের বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদ্রাসা। দেশের মানচিত্রে পাখির ঠোঁটের মতো বাড়তি স্থানটি সীমান্ত এলাকা জকিগঞ্জের এ মাদ্রাসাটি হাঁটি হাঁটি পা পা করে ২০২০ সালে শতবর্ষকে স্পর্শ করেছে। দীর্ঘ শতবর্ষের পথচলায় সিলেট অঞ্চলের ধর্মীয়, নৈতিক, মানবিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও শৈক্ষিক পরিবেশকে প্রভাবিত করেছে এ মাদ্রাসাটি।
ধর্মপ্রাণ এলাকাবাসীর উদ্যোগে ১৯২০ সালে মক্তব হিসেবে যাত্রা করলেও পরবর্তীতে ক্রমে ক্রমে ছড়িয়েছে তার ডালপালা ; বেড়েছে তার পরিধি। এক পর্যায়ে এ মাদ্রাসাটি উপমহাদেশের আধ্যাত্তিক জগতের বটবৃক্ষ আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা লাভ করে। ছাহেব কিবলাহর নিজের শ্রম, ঘাম, মেধা, অর্থের পাশাপাশি তাঁর ভক্ত মুরিদানগণ এ মাদ্রাসার উন্নয়নের চাকাকে সচল রেখেছেন।
মাদ্রাসাটিতে ১৯৭৭ সালে আলিম, ১৯৮৯ সালে ফাজিল, ১৯৯৪ সালে কামিল (হাদীস) ২০০১ সালে কামিল তাফসীর ও ২০১০ সালে অনার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৭৭ সালে মাদ্রাসায় একটি পাঠাগার গড়ে তোলা হয়।
দেশী বিদেশী বহু শিক্ষানুরাগীর সাহায্য সহযোগিতায় এলাকাবাসীর আন্তরিকতায় ফুলতলী ছাহেব কিবলাহর বদান্যতায় ফুলতলী মাদ্রাসায় ফুটেছে শত ফুল। বহু ত্যাগী ও প্রাজ্ঞ শিক্ষক দীর্ঘ সময়ে সিলেটের সবুজ শ্যামল নিভৃত পল্লী ফুলতলীতে জ্ঞানের মশাল জালিয়েছেন। প্রায় তিন একর জায়গার উপর গড়ে উঠা ক্যাম্পাস প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হলেও ক্যাম্পাসের বাইরে মাদ্রাসার প্রায় ১৭ একর অর্থাৎ ৫১ বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৪ একর জমি আল্লামা ছাহেব কিবলাহ একাই দান করেছেন। মাদ্রাসার ৫টি ভবনের মধ্যে ইউ আকৃতির মূল একাডেমিক ভবন, একটি পরীক্ষার হল, ৩টি ছাত্রাবাস রয়েছে।
আল্লামা ফুলতলীর কারণে ফুলতলীর পরিচিতির পরিধি দেশজুড়ে-বিশ্বজুড়ে। রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি,মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ দেশী বিদেশী বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আগমনে ফুলতলী মাদ্রাসার প্রাঙ্গণ ধন্য হয়েছে ; পেয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব।
বাতির নিচে অন্ধকার থাকে। ১০০ বছরের পুরনো ফুলতলী মাদ্রাসায়ও রয়েছে কিছু সমস্যা। এর মধ্যে শিক্ষক আবাসিক নেই। শিক্ষার্থীদেরও আবাসিক সংকট রয়েছে। নেই পর্যাপ্ত সৌচাগারও। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে এখানে এখনো কম্পিউটার ল্যাব হয়নি।দুর্বল গতির ইন্টারনেটের কারণে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণি কক্ষও চালু করা যাচ্ছে না পুরোপুরি। শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মিলনায়তন এবং মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন নেই এখানে। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক ও কর্মচারীর অভাব রয়েছে এ মাদ্রাসায়।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আশা করছেন সরকারীভাবে নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন চারতলা বিশিষ্ট একাডেমীক ভবনটি নির্মিত হলে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মাদ্রাসার অ্যধক্ষ আব্দুর রহিম ও ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান চৌধুরী জানিয়েছেন আগামীতে মাদ্রাসায় বিজ্ঞান বিভাগ ও ভাষা শিক্ষার বিশেষ কোর্স চালুসহ মাদ্রাসার সার্বিক উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।
Posted ১:৪৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad