কে,এ,রাহাত, গোয়াইনঘাট: টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাটে ১৫দিনের ব্যাবধানে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে উপজেলার প্রধান প্রধান নদ নদীর পানি।
পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সারী-গোয়াইনঘাট, গোয়াইনঘাট -ফতেহপুর
ও রাধানগর-গোয়াইনঘাট এবং সালুটিকর গোয়াইনঘাট সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ এসব সড়ক সমূহের উপর দিয়ে কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বসত বাড়িতে পানি উঠায় পানিবন্দি হয়ে অনেকে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। বসত বাড়ির পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকের পুকুরে পাড় ডুবে মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা কয়কে দিনের ভারী বর্ষণ এবং সারী, গোয়াইন, ডাউকি, ও পিয়াইন নদী দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বৃহস্পতিবার থেকে গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত যা বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের জাফলং চা বাগান, মমিনপুর, আসাম পাড়া, আসাম পাড়া হাওর, ছৈলাখেল অষ্টম খন্ড (আংশিক এলাকা) নবম খন্ড, সানকিভাঙ্গা, নয়াগাঙের পার, বাউরবাগ হাওর, ভিত্রিখেল হাওর, আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দার হাওর, তিতকুল্লিহাওর, বুধিগাঁও হাওর, রাজবাড়ি কান্দিসহ পশ্চিম জাফলং, রুস্তমপুর, ডৌবাড়ী, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাটসহ বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
এতে করে কৃষকের আউশ ধান, বোনা আমন, বীজ তলা এবং সবজি ক্ষেতসহ প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। যদিও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দাবী তলিয়ে যাওয়া ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮শ হেক্টরের মতো হবে। যার মধ্যে ৮০০ হেক্টর আউশ ধান, ২০ হেক্টর বোনা আমন ও ২০ হেক্টর বীজ তলা এবং ১০ হেক্টরের মতো সবজি ক্ষেত রয়েছে । তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সুলতান আলী জানান, পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে আউশ ধান, বোনা আমন ও আমন ধানের বীজতলা এবং সবজি ক্ষেতসহ সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৮শ’ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে এর পরিমান আরও বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর যদি বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হয় তাহলে, তলিয়ে যাওয়া ফসলের তেমন কোন ক্ষতি হবেনা বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কথা হলে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুস সাকিব বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ডাউকি, গোয়াইন এবং সারী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবকটি ইউনিয়নের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বন্যায় জনগণের দূর্ভোগ লাগবে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ জানান, ১৫ দিনের ব্যবধানে ফের বন্যা দেখা দেয়ায় পানিবন্ধি হয়ে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। এছাড়াও বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কয়েকটি সড়কের উপর দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় রাস্তাঘাটের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, একদিকে করোনা মহামারী, অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় মনিটরিং করে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেয়ার পাশাপাশি পানিবন্ধি মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।