মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

জাফলংয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির স্বাক্ষর জালিয়াতি: তদন্ত কমিটি গঠন

কে. এ. রাহাত, গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি:-   সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০১৯     273 ভিউ
জাফলংয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির স্বাক্ষর জালিয়াতি: তদন্ত কমিটি গঠন
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বহুল পরিচিত বিদ্যাপিঠ জাফলং আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রাপ্তির পর অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পা্ওয়া গেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির স্বাক্ষর জাল করে এমপিও‘র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়েও ধরা খেলেন পরিচালনা কমিটির হাতে। এ নিয়ে গোটা উপজেলায় চলছে সমালোচনা। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় শত বৎসরের বিদ্যাপিঠটি এখন আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, চলতি বছরের ৬ আগস্ট অত্র বিদ্যালয়ের শূন্যপদে প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই নিজের ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সকল সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতি করেন। নিয়োগ অনুমোদনের জন্য রেজুলেশনের মাধ্যমে নিজের এমপিও ভূক্তির কাজ অনলাইনে সম্পন্ন করেন। যা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অবগত নয়। শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিজের ফায়দা লুটতে স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম করে আসছেন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা কমিটির স্বাক্ষর জালের খবর এলাকা তথা প্রশাসনের নজরে আসলে তড়ি-গড়ি করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে স্বাক্ষর জালিয়াতির সত্যতাও মিলেছে বলে খবর পা্ওয়া গেছে।
গত ২০ আগস্ট সোশাল মিডিয়ায় মিনহাজ উদ্দিন নামের ফেইসবুক আইডি থেকে খবরটি ভাইরাল হয়। সেই স্টেটাস হুবহু তুলে ধরা হলো-
“যোগদান পাকাপোক্ত হওয়ার আগেই দ‚র্নীতিতে জড়ালেন গোয়াইনঘাটের ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপিঠ আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবপদায়নকৃত প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান। জাফলং আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির যোগদান অনুমোদন ছাড়াই সভাপতি, অভিভাবক সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ইনডেক্সের (বেতনের টাকা উত্তোলনের) জন্য মাউশিতে অনলাইনে আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবযোগদানকৃত ও পিয়াইনগুল কলিমুল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামানের আবেদন। শুধু কি তাই! তিনি একটি বিদ্যালয়ে প্রাণ যাকে বলা হয় রেজুলেশন বহিঃ পাতা ছিড়ে নিয়ে নিজে নিজেই রেজুলেশন লিখে তাতে বিদ্যালয়ের সভাপতি, অভিভাবক প্রতিনিধি, শিক্ষক প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর জালিয়াত করেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের অনলাইন আবেদনের প‚র্বেকার পিনকোড পরিবর্তন করে সেটা তিনি তার নিজের কাছেই সীমাবদ্ধ রাখেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। যোগদান পাকাপোক্ত হওয়ার আগেই মহাদ‚র্নীতির ইঙ্গিত!!, এ যেন পুকুর চুরির আগাম আবাস!!!!। এ ঘটনায় তিনি বিদ্যালয় সভাপতি, অভিভাবক প্রতিনিধি, শিক্ষক প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মিদের কাছে জালিয়াতির ঘটনা স্বীকার করেছেন। তাৎক্ষণিক আজ দুপুর ২টা হতে সন্ধা সাড়ে ৭ টা পর্যন্ত বিদ্যালয় সভাপতি, অভিভাবক প্রতিনিধি, শিক্ষক প্রতিনিধিসহ সবাই মিলে জরুরি সভা করেন এবং নিজের কৃতকর্ম স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান সাদা কাগজে একটি লিখিত দিয়েছেন। বিদ্যালয় সভাপতি ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। কমিটি আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বদলেছেন। একটি মহল বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এব্যাপারে কথা হলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সফিউল আলম সেলিম বলেন, যোগদান অনুমোদনের আগেই কমিটির কারো অনুমতি না নিয়েই স্বাক্ষর জাল করে বেতনের টাকা উত্তোলনের জন্য (ইনডেক্স ওপেন) আবেদন করেন প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি স্বীকার করে তিনি সাদা কাগজে একটি লিখিত দিয়েছেন। এ ঘটনায় আমি ৩ সদস্য কমিটি গঠন করে দিয়েছি, আগামী ৫কার্য দিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দিবেন। তদন্ত রিপোর্টের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবযোগদাকৃত প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামানের দ্বারা শুরুতেই এ অবস্থা হলে ভবিষ্যতে কপালে দুঃখ আছে জাফলংবাসির। এটা হাকাভাবে দেখলে আশকারা দেয়া হবে, ভবিষ্যতে ঐতিহ্যবাহি এই বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা তসরুফ হলে এর দায় কে নিবেন??? কিমিটি??? তাই সময় থাকতে সাধু সাবধান!!!! এ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিসেবে আমি এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি”।
নিযোগে স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও পরিচালনা কমিটির সদস্য ফখরুল ইসলাম জানান, “আপনারা যা শুনেছেন তা সত্য, নিয়োগ অনুমোদন নিয়ে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোন মিটিং ডাকা হয়নি। অভিযুক্ত শিক্ষক কিভাবে কমিটির সকল সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে তার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তা আমার জানা নেই। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাধে দেখতে পেয়ে আমিও বিচলিত এবং যিনি শুরুতেই জালিয়াতি করেছেন তিনি কিভাবে বহাল তবিয়তে আছেন এ ব্যপারে আমরা লজ্জিত”  তিনি আরোও জানান “কিছু দিনের মধ্যে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কিমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে তখন আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন।”
আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক বেলাল আহমদ বলেন- “আপনারা যা শুনেছেন তা সত্য, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সদস্য ফখরুল ইসলাম, শামীম আল মনির ও আইয়ুব আলীকে দিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে”
অভিযুক্ত সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মনিরুজ্জামান এই প্রতিবেদকের সাথে মোবাইল ফোনে প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।
শিক্ষক নিয়োগে স্বাক্ষর জালিয়াতির ব্যাপারে জাফলং আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ শফিউল আলম সেলিম এর সাথে মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন সাক্ষাতে বিস্তারিত আলাপ হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নজরুল ইসলাম’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- “শিক্ষক নিয়োগে এমন অনিয়মের খবর আমি লোক মুখে শুনেছি এবং বিষয়টি ডিডি মহোদয়কে অবহিত করে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে রাখা হয়েছে। তিনি আরোও বলেন লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয় হবে। গত ২২ জুলাই মোঃ মনিরুজ্জামানকে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে নির্বাাচিত করা হয় এবং পরিচালনা কমিটির কোন মিটিং হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
এব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন- “স্বাক্ষর জালিয়াতি যদি হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অভিযুক্ত শিক্ষককে নিয়ে একাধিক মিটিং পরিচালনা করেন আমার বোধগম্য নয়।”
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:৫৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০১৯

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com