ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই পদ থেকে বাদ দেওয়া হলো শোভন ও রাব্বানীকে। তাদের সাংগঠনিক পদ-পদবী থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে পদত্যাগে বাধ্য করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে দুই উদীয়মান নেতার পদবী। আরও সোজা সাপ্টা কথায় বললে তাদের বহিস্কার করা হয়েছে। দায়িত্বশীলতা অভাব, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাদ, বহিস্কার, অব্যাহতি দেওয়া এবং নতুনকে দায়িত্বশীল পদ-পদবীতে অভিষিক্ত করার বিষয়টি আজকের আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচনার বিষয় ডাকসু’র জেনারেল সেক্রেটারীর পদ কেন্দ্রিক।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ঘটনাবহুল নির্বাচনে জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী। তাকে যে সব অভিযোগে ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগের গুরুত্বপুর্ণ পদ কেড়ে নেওয়া হলো, এই সব অভিযোগের সত্যতা থাকলে মিনি মন্ত্রী পরিষদ খ্যাত দেশের শিক্ষা অঙ্গন ডাকসু’র কেবিনেটের অতীব মর্যাদাপুর্ণ পদে আসীন থাকার এখতিয়ার সে রাখে কি? ছাত্রলীগের ঐতিহ্যে কালিমা লেপনের অভিযোগ প্রমাণ পেয়ে তাকে/তাদের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। তাহলে ডাকসু’র জিএস পদ তার বহাল থাকলে ডাকসু তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ভুলন্ঠিত হবে বৈ কি? দূরদর্শী রাজনীতির অগ্রসেনানী বঙ্গবন্ধু কন্যা, রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী শেখ হাসিনা এ বিষয়টি তাঁর ভাবনায় রয়েছে কি? যদিও প্রত্যক্ষভাবে ডাকসু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের সুযোগ রহিত। অন্যদিকে ছাত্রলীগের পদেও নেই রাব্বানী। তবে পরোক্ষভাবে তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) করণীয় অনেক সুযোগ রয়েছে। আশার কথা যে বা যারা দায়িত্বের প্রতি উদাসীন, অপরাধে জড়িত তাদের/তার প্রতি শাস্তি আরোপে কার্পণ্য করেন না। এ ক্ষেত্রেও তাঁর অবস্থানের হেরফের হবে না বলে দেশবাসীর বিশ্বাস করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন ন্যায্য আন্দোলনের সূঁতিকাগার ডাকসু১/১১ পর্যন্ত কতো ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’র ১১ দফা, ৭১’র মুক্তিযদ্ধ, ৯০’এ স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন, ৯৬” এ নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের পত্তন সহ কতো কিছুতে বিপ্লব জাগানিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া সচেতন ছাত্রসমাজের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। ত্যাগের দাবানলের স্ফুলিংগ ডাকসু’র নেতৃত্বে তো ছাত্রলীগের গুরুত্বপুর্ণ পদ থেকে বিতাড়িত ছাত্রনেতাকে বহাল রাখা পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তের সাথে সাংঘর্ষিক।
অতীত পর্যালোচনায় দেশে বরণ্যে নেতার সৃষ্টি করেছে ডাকসু, ডুয়েট, চাকসু, জাকসু, রাকসু। আজও তাদের কিছু সংখ্যকের নেতৃত্বের সৌরভে উদ্ভাসিত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। কিন্তু যে ভাবে এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগের পর যুগ ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বেখেয়াল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, তাতে নেতৃত্ব সৃষ্টির মূল ফটকগুলো দিনদিন বন্ধের দিকে যাচ্ছে। সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার অভাবে গড়ে ওঠছে না সৃজনশীল নেতৃত্ব। ব্যবসায়ী ধনকুবেরদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে রাজনীতির গতি পরিক্রমা। এ থেকে উত্তোরণে প্রয়োজনীয় সংস্কার পথে এগিয়ে চলা সময়ের দাবি।
–নূরুল নাভেদ
সাংবাদিক
#লেখকের ফেইসবুক ওয়াল থেকে
১৫, ০৯, ১৯
Posted ২:৪৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad