ডেস্ক রিপোর্ট: নিষ্ঠুর মায়াবী পৃথিবী কখনও কখনও এক অপার্থিব জগতে আমাদের ছুঁড়ে দেয়। মৃত মানুষ, চৈতন্যের কোন অদ্ভুত অনুভূতিকে আঘাত করে তা আমাদের জানা নেই। বিষাদের চিহ্ন বুকে নিয়ে এক রাত আসে, নেমে আসে স্বপ্নহীন অনাকাঙ্খিত এক বন্ধ্যা সময়। তারপর এলোমেলো রাতের বাতাস গায়ে মেখে সে রাত ছুটে চলে ভোরের অপেক্ষায়। আয়োজন চলে এক অসমাপ্ত অধ্যায়ের মহাপ্রস্থানে…।
মানুষের চাপা কান্নায় ভারি হয় মহালদার বাড়ির আঙ্গিনা। সার্বজনীন বাড়ির স্বপ্নদ্রষ্ট ওপাড়ের ঐশ্বর্যে ধূপের ধোয়ায় ভেসে যায়। স্বপ্নরা ঘা ভাসায় ধূপের ধোয়ায়। শবদাহ চলে প্রিয়জনের কাঁধ হয়ে শেষ গন্তব্যে।
চলে গেলেন না ফেরার দেশে বকুল পাল মহালদার। ২৫ নভেম্বর রোজ বুধবার রাত ১১.৩০মিনিটের সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিকে ইহলোককের মায়া ত্যাগ করে তিনি পরলোক গমন করেন। বকুল পাল ছিলেন শ্রীমঙ্গলের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবক, রুপসপুর সার্বজনীন দুর্গা বাড়ীর সভাপতি ও উক্ত এলাকার প্রধান মুরব্বী। উনার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০.৩০ মিনিটে শ্রীমঙ্গল সবুজবাগ শ্বশানঘাটে অনুষ্ঠিত হয়। মৃত্যু কালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, পুত্র বধূ, এক কন্যা, নাতনি, তিন ভাই সহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখেযান।
বকুল পালের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ অনুমতি হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি। এছাড়াও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব রনধির কুমার দেব, ভাইস চেয়ারম্যান প্রেমসাগর হাজরা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মনসুরুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. হরিপদ রায়, মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরফদারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বকুল পাল ১৯৫৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রাজারবাজার পৈতৃক বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তিনি রাজারবাজার উচ্চ বিদ্যালয় ও পরে বৃন্দাবন কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষে ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। আর্দশ ও সততার জন্য তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসায়িক সফলতা লাভ করেন। রাজনৈতিক সচেতন বকুল পাল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। দলমত নির্বিশেষে সকলের নিকট তিনি সমান ভাবে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। অসাধারন সাংগঠনিক দক্ষতার অধিকারী এই মানুষটি নিজ উদ্দ্যেগে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেন দক্ষিন রুপসপুর শ্রী শ্রী দুর্গা বাড়ী। যা আজ একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। সমাজের ছোট বড় সকলের নিকট তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি। তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারনে সমাজের অপরাপর মানুষজন কে তিনি সহজেই আকৃষ্ঠ করতে পেরেছিলেন। একজন আর্দশিক সালিশ ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর গ্রহনযোগ্যতা ছিল সবার নিকট।
তেতো লবনাক্ত জীবনের বাঁকে বাঁকে এমন এক আঁধার নেমে আসবে তা রুপসপুর এলাকাবাসী কখনও কল্পনা করেনি। তাই প্রিয় এই মানুষটির শেষযাত্রায় অসংখ্য মানুষের ঢল নামে। প্রথমে দক্ষিন রুপসপুর শ্রী শ্রী দুর্গা বাড়ী পরে শ্রীশ্রী জগনাথ দেবের আখড়া প্রাঙ্গন ও সৎসঙ্গ আশ্রমে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাও হয়। সেখানে মানুষের অশ্রুসজল চোখে শেষ বারের মতো তাকে দেখার আকুতি যেন শেষ হয় না। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হতে হতে তার দেহ উঠে চিতায়।জয়ধ্বনী, হরিধ্বনী, ধূপ গন্ধে দেহ পুড়তে থাকলো। আর সেই সাথে মহাপ্রস্থান ঘটে এক অসমাপ্ত অধ্যায়ের।
লেখক– গোবিন্দ রায় সুমন
Posted ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad