বিজয় রায়, ছাতক: ছাতকে হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বাঁধের কাজ নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারী শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখানের বেশ কটি বাঁধের কাজ এখনো অসমাপ্ত থাকায় তা জরুরী ও সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। অন্যতায় বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা পিআইসি সভাপতি-সচিবের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ার করে দেয়া হয়।
জানা যায়, গত ক’দিন ধরে এখানের হাওর রক্ষা বাঁধগুলো পরিদর্শন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাঁধ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম কবিরসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
১০ ফেব্রুয়ারী উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের চাউলীর হাওরের পিআইসি ৩ এবং পিআইসি ৪ এর আওতাধিন বাঁধ পরিদর্শন করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাঁধ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম কবির, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কেএম মাহবুব রহমান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ছাতকের উপ সহকারী প্রকৌশলী খালিছ হাসান ও ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন।
পরিদর্শনকালে কর্মকর্তারা বাঁধের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে নির্মিত বাঁধকে আরো মজবুত ও টেকসই করার জন্য বেশী করে ঘাস ও ঢুল-কলমী লাগানোর পরামর্শ দেন সভাপতি ও সচিবকে।
এর আগে ১৭ ডিসেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সচিব শাহিন আক্তার, ১৩ জানুয়ারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃক গঠিত মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও একজন সদস্য এসব বাঁধ পরিদর্শন করেন।
বৃহস্পতিবার পিআইসি ৩ এবং পিআইসি ৪ এর আওতাধিন নির্মিত বাঁধ সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিআইসি ৪ এর ৮৪২ মিটার বাঁধের কাজ যথাসময়ে শেষে করা হয়েছে। বর্তমানে ডজন খানেক শ্রমিক বাঁধের শ্লোপে ঢুল-কলমী রোপন এবং বাঁধের ফাটল মাটি দিয়ে ভরাট করছে। বৃষ্টি না হওয়ায় বাঁধে লাগানো মরা ঘাসে পানি দিচ্ছে শ্রমিকরা। একই ভাবে পিআইসি ৩ এর আওতায় ডেংগার খাড়া, চৈলতা গাছের তল ১৪৪ মিটার, সিরাজগঞ্জ বাজার খালের মুখ ১৪ মিটার এবং গহরপুর খালের মুখ ৩০ মিটার বাঁধের কাজ শেষ করা হয়েছে।
চাউলীর হাওর রক্ষা বাঁধ গুলো বোরো ফসল রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাসহ সকলের নজরে রয়েছে বাঁধগুলো। যার ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও তুলনামুলক অধিক তদারকিতে রেখেছেন এসব বাঁধ।
পিআইসি ৩ এর সভাপতি উপেশ সূত্রধর জানান, হাওরের এ অংশে তিন ভাগে ১৮৮ মিটার ভাঙ্গা বন্ধকরন ও মেরামতের কাজ শেষ করা হয়েছে। কয়েক দফা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি বাঁধ পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সরকারী আদেশ অনুযায়ী কাজ শেষ হলেও এখনো শ্রমিকদের দিয়ে বাঁধে অতিরিক্ত কাজ করানো হচ্ছে।
এ প্রকল্পে সরকারী বরাদ্দ দেয়া হয় ৯ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬৭৬ টাকা। ইতি মধ্যেই বরাদ্দের শতকরা ৫০ ভাগ টাকা তিনি উত্তোলন করেছেন বলে জানান।
পিআইসি ৪ এর সভাপতি আব্দুল জলিল জানান, ৮৪২ মিটার ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরন ও মেরামতের বিপরীতে সরকার ২০ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৫৬ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কর্মকর্তারা বাঁধ পরিদর্শন করে কিছু পরামর্শ দিয়ে গেছেন। পরামর্শ অনুযায়ী বাঁধে অতিরিক্ত কাজ করছে শ্রমিকরা।
এদিকে শুক্রবার উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের পিআইসি ১ ও পিআইসি ২ আওতাধিন নাইন্দার হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করে কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কবির।
পিআইসি ১ এর সভাপতি আব্দুর রশিদকে বাঁধের অসমাপ্ত কাজ ৩ দিনের মধ্যে সমাপ্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ১০৬ মিটার বাঁধের ভাঙ্গা অংশ বন্ধকরন ও বাঁধ মেরামত কাজে সরকারী ৬লাখ ২৯ হাজার ৯৮২ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে পিআইসি ২ এর আওতাধিন বাঁধের কাজও সন্তোষজনক নয়। ৮৩ মিটারের তিনটি খালের মুখ বন্ধকরনের কাজে সরকারী ৮লাখ ২৮ হাজার ৪৪০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ছাতকের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী খালিছ হাসান জানান, পিআইসি ১ এর বাঁধ নির্মাণ কাজ মোটেই সন্তোষজনক নয়। বাঁধ পরিদর্শকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসমাপ্ত কাজ ৩ দিনের মধ্যে সমাপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন পিআইসি ১ এর সভাপতি আব্দুর রশিদকে। অন্যতায় তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান। পিআইসি ২ এর বাঁধ নির্মানের কাজ দ্রুত শেষ করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
Posted ১০:০৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৪ মার্চ ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad