আলম সাব্বির, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তবর্তী ভারতের বিশাল খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশ থেকে প্রবাহিত যাদুকাটা নদী। প্রবাহমান যাদুকাটা নদীটি দিনের বিভিন্ন সময় যেন যাদুবলে রূপ বদলায়। কখানো গাঢ় সবুজ রং ধারণ করে, আবার কখনো হালকা রক্তিম। বর্ষায় নদীর উন্মত্ততায় পিলে চমকে দেয়।আর হেমন্তের হিমশীতল জলের কাছে চিকচিক বালুর দৃশ্য পর্যটকদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয় বলে পর্যটকরা এ নদীকে রুপের রাণী বলে অভিহিত করে থাকেন।
কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে এখন আর আগের মত ভালো নেই রুপের বিচ্যুরন ঘটানো যাদুকাটা নদী, সেই সাথে ভালো নেই বালু ও পাথর শ্রমিকরা। প্রশাসন কর্তৃক যাদুকাটা নদীর বালু ও পাথর উত্তোলন প্রায় এক বছর যাবত বন্ধ করে দেওয়ায় নানা সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন নদীর তীরবর্তী এলাকার খেটে খাওয়া মানুষেরা যাদের উপার্জনের একমাত্র উৎস ছিল যাদুকাটা নদী।
সেই আদিকাল থেকে যাদুকাটা নদী ছিল এলাকার মানুষের রোজগারের অবলম্বন। জেলেরা মাছ ধরত আর সেই নদীর মাছের কদরই ছিল আলাদা। আর শ্রমিকরা বালু-পাথর আহরণ ও বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করত যার ফলে এদের জীবন প্রণালী অত্যান্ত সাদা মাটা থাকলেও পরিবারে সুখ ছিল, স্বাচ্ছন্দ ছিল।
কিন্তু পরিবেশ বাদী সংঘটনের একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশনা ওমন্ত্রী পরিষদের সিদ্বান্তনুযায়ী বন্ধ হয়ে যায় যাদুকাটা নদীর বালি পাথর উত্তোলন।পরিবেশ বিপর্যয় বন্ধে এ নিষেধাজ্ঞা চিরচারিত সনাতন পদ্বতিতে খেটে খাওয়া শ্রমিকদের উপড় মারত্বক ভাবে প্রভাব পড়ে।যার ফলে আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে খেটে খাওয়া হাজার হাজার দরীদ্র শ্রমজীবি মানুষ,জীবন বাচাতে কাজের সন্ধানে দিকবিদিক ছুটছে ওরা।
বাংলাদেশে রুপের খ্যাত যাদুকাটা নদীতে এক সময় সকাল থেকে সন্ধা অবধি শ্রমজীবি নর নারীর উপস্থিতিতে সরব থাকত কিন্তু পর্যটন সমৃদ্ধও এনদী যেন আজ প্রান হারিয়েছে।নদীতে সারিসারি নৌকা দেখা যায়না, নদী গর্ভ থেকে বালতি করে বালি উত্তোলনের দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। মাথায় পাথরের বোঝা নিয়ে হাটতে দেখা যায়না আর কোন দরীদ্র অসহায় মহিলাকে।বালি চেলে নুড়ি পাথর তোলা কিংবা বেলচা দিয়ে জাকিতে পাথর উত্তোলনের ঝনঝন শব্দও আর শোনা যায়না বছর খানেক ধরে।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তিয়া পাহাড়ের ঝর্নাধারায় সৃষ্ঠি হওয়া এ নদী কখনো পাহাড় ধ্বসে বালির সাথে কয়লার মিশ্রন ঘটিয়ে প্রবেশ বাংলাদেশে আবার কখনো বালির বিশাল স্তর নিয়েও প্রবেশ করে যাদুকাকাটা নদীতে আর এতে করেই দরীদ্র শ্রমজীবিদের জীবিকার পথ উন্মোচিত হয়। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত তাদের শ্রম দিয়ে বালি পাথর উত্তোলনও বিক্রয় করে যা রোজগার করত তাতে শ্রমিক শ্রেণীর লোকজনের খেয়ে পড়ে ভালো ভাবে কেটে যেত তাদের দিনকাল। সেই সাথে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচও সহজেই মেটাতে সক্ষম হতো। কিন্তু বর্তমানে শ্রমজীবি পরিবার গুলোর সংসারে মারাত্বক আকালের দেখা দিয়েছে , দিনে তিন বেলাতো দুরে থাককু একবেলা খেয়েও চলছে না তাদের দৈনন্দিন জীবন।
এদিকে সংকটময় এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত নদী যাদুকাটায় ভারতের ওপার থেকে পানির সঙ্গে ভেসে আসা কয়লার ছোট ছোট টুকরো ও কণা অনেকটা আশীর্বাদ হিসেবে মনে করেছিলেন গরিব শ্রমজীবীরা। হিমশীতল পানিতে ঠ্যালা জালে সারাদিন গলা সমান পানিতে দাড়িয়ে হাজারো নরনারী,শিশু,যুবক কয়লা তোলেন যা খুবই মর্মস্পর্শী দৃশ্য।
মানিগাঁও গ্রামের নারী শ্রমিক দিলনাহার বেগম,লাউড়েরগড়ের মিনারা,জমিলা বলেন ‘ছেলেমেয়ে নিয়া কষ্টে দিন কাটে। নদী বন্ধ হলে চুলা বন্ধ হয়ে যায়। এখন নিরুপায় হয়ে নদী থেকে কয়লা কুড়িয়েই বেঁচে আছি কোনোরকম।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন নদীর তীর কাটা সহ বিভিন্ন যন্ত্র চালিত মেশিন দিয়ে পাথর বালি উত্তোলন করায় মন্ত্রী পরিষদের সিদ্বান্তের আলোকে খনিজ মন্ত্রনালয় কর্তৃক যাদুকাটা নদীর ফাজিলপুর নামক মহালটি ইজারা স্থগিত রেখেছে।সম্প্রতি তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় উপজেলার শ্রমজীবিব মানুষের স্বার্থে সনাতন পদ্বতিতে পালি পাথর উত্তোলনের সুপারিশ করে একটি রেজুলেশান সং¤িøষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।আশা করি মন্ত্রনালয় সরকারী রাজস্ব প্রাপ্তির প্রয়োজনেও সহ শ্রমজীবি মানুষের কল্যানে অচিরেই এ মহালটি ইজারা প্রদানের সিদ্বান্ত গ্রহন করবে বলে আমি আশা করি ।
Posted ১২:৩৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad