ডেস্ক রিপোর্ট : মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দেশের ৬৪ টি জেলার ১টি করে বধ্যভূমিতে ‘গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার’ শিরোনামে নাটক নির্মাণ করছে। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত বধ্যভূমি ‘বধ্যভূমি ৭১’ নিয়ে নির্মিত হয়েছে গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার ‘রক্তাক্ত বটের আখ্যান’। নাটকটি লিখেছেন নাট্যকার গোবিন্দ রায় সুমন, নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের থিয়েটার এÐ পারফম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান মোঃ আশিকুর রহমান লিয়ন। সহযোগি নির্দেশক হিসেবে আছেন রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাক।
২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭.০০ ঘটিকায় বধ্যভ‚মি ৭১, শ্রীমঙ্গলে মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘রক্তাক্ত বটের আখ্যান’। মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ এম পি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, সেক্টর সদর দপ্তর শ্রীমঙ্গল এর কমান্ডার কর্ণেল তুহিন মো: মাসুদ, মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মৌলভীবাজার এর সাধারণ সম্পাদক এম এমদাদুল হক মিন্ঠু ও নাট্যকার গোবিন্দ রায় সুমন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মৌলভীবাজার এর কালচারাল অফিসার জ্যোতি সিনহা।
নাটকটিতে ১৯৭১ সালের তৎকালীন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের গণহত্যার নৃশংস ঘটনার উপস্থাপন করতে গিয়ে স্থানিক ইতিহাসকে গুরুত্ব দিয়ে নাট্যিক উপস্থাপনে বহুমাত্রিক শিল্পরীতি অবলম্বন করা হয়েছে। স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া একঝাঁক কিশোর ও তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীর অংশগ্রহনে দর্শকরা এখানকার গণহত্যার ইতিহাস পাঠ করতে পারেন। যুদ্ধের ভয়াবহতায় যে শূন্যতায় নিমজ্জিত হয় এই পৃথিবী সেই যুদ্ধযাত্রা পথ ধরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চিত্র উঠে আসে নাটকে।
৯ মাসের যুদ্ধযাত্রায় বিলাস ছড়ার জল, ভুরভুরিয়ার আর্তনাদ, সিন্দুরখান এর রক্তস্রোত, ওয়াবদা গেটের হাহাকার, সাধুবাবার বয়সীবট এর বয়ান নিয়ে ‘রক্তাক্ত বটের আখ্যান’। নাটক নির্দেশনায় নির্দেশক মূলত পরিবেশনার স্থান এবং স্থানিক ইতিহাস, বৈশিষ্ঠ্য, বৈচিত্রতা এবং সামগ্রিক স্পেস ডিজাইনের বাস্তবতায় অভিনেতাদের উপস্থাপনার সাথে বহু অক্ষিয় দর্শকের সম্পর্ক ও প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেন। সেই সাথে নাটকে চরিত্রে টানে বাস্তব হয়ে উঠে আসেন সমীর, শম্ভু, অর্জুন, মুকিত, রানু, সিন্দুরখানের গোবিন্দ চরন সোম, সোনাতন, ফুলছড়ার আইমুল, রাজঘাটের বাসু, লকলকে আগুনে দগ্ধ হওয়া নিকুঞ্জ বিহারী, কেতকী সেন, কৃষ্ণ পোদ্দারা, লক্ষী গোয়ালাদের তীব্র আত্মচিৎকার আর আনিস, আবুল বসরদের প্রাণ দানের কথা।
প্রায় ২ হাজার দর্শক উপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় স্থান সাধুবার বটতলাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার যে প্রয়াস তা দৃষ্টিনন্দন ও শৈল্পিকভাবে উপস্থাপিত হয়। নাটকটির অভিনয়, আলোক পরিকল্পনা, আবহ সংগীত প্রক্ষেপন দর্শকদের কাছে এখানকার স্থানিক ইতিহাসকে পৌছাতে সক্ষম হয়। নাটক নির্দেশনায় নির্দেশক পরিবেশ থিয়েটার ও মঞ্চ আদল কে ভেঙ্গে এক নতুন পরিবেশনায় অভিনেতাদের মুভমেন্ট ডিজাইন করেছেন। যে কারনে উপস্থিত দর্শক প্রতিটি কোন থেকে নাটকটি উপভোগ করেতে পেরেছেন। নাটকের সংলাপ ও শব্দচয়নে নাট্যকারের ছিল স্বচ্ছন্দগতি।
নাটকটিতে অভিনয় করেন, মৃত্যুঞ্জয় পাল, নারায়ন দেবনাথ, টিপু সরকার, ইমন পাল, মৃত্তিকা দাশ আলো, পারমিতা পন্ডিত শ্রাবন্তী, কাজী আকিকুর রহমান শুভ, অগ্নিভ প্রাঞ্জন দীপ, কুনাল দত্ত, আকাশ ভৌমিক, পূর্নিমা বাসপার, কান্তা আচার্য্য, অজিত দাস ( অভিজীৎ), স্বাগতা লক্ষী দত্ত, আকাশ চন্দ, সামিউর রহমান সামি, মন্দিরা দেব, শিল্পি দাশ, লিলি দেব, জয়ন্ত দাশ আকাশ, প্রিয়াংকা দেব নাথ, পূজা স্বর্নকার, দ্বীপ পাল, আকাশ দাশ, শামিম আহমেদ, অর্পিতা কানু, প্রসেনজিৎ দেব, পংকজ ভট্রাচার্য্য, উল্লাস দেব নাথ, ঝিনুক বৈদ্য, রাকিব আহমেদ, শান্ত সরকার, ফাল্গুনী রানী দে, সৃষ্টি রানী স্বর্নকার, পুনম সাহা, মাহিমা আহমেদ চৌধুরী মুন্নী, রবিন আহমেদ (রুমন), মৌসুমী সরকার, হেপী সরকার, মিতু আক্তার, হৃদয় আহমেদ, রিম্পি দাশ, আলামিন মিয়া, সুষময় চাষা, অমিত মাহান্তী, শিপন পাল, শ্রাবন মাঝি, কাইয়োম মিয়া (আদি), মো: রাসেল মিয়া, মো: সুমন মিয়া, মো: সাকিল আহমেদ, মো: হৃদয় মিয়া, মো: আলানি মিয়া, মো: রিপন আহমেদ, সারদ চৌধুরী, পরিতোষ দেব নাথ, জামিল হরিজন, মুন্না বাসপার, বিসাল বাসপার।
নাটকটির লোগো ডিজাইন করেন মনিরুল আহ্সান, কোরিওগ্রাফিতে ছিলেন দ্বীপ দত্ত আকাশ, আলোক প্রক্ষেপনে শাহজাহান মিয়া, শব্দ প্রক্ষেপনে রাজন পাল। পোষাক, প্রপ্স ব্যবস্থাপনায় মৃত্যুঞ্জয় পাল, নারায়ন দেবনাথ, টিপু সরকার, কাজী আকিকুর রহমান শুভ, আকাশ ভৌমিক। মঞ্চ ব্যবস্থাপনা আশিকুর রহমান সুজন, অগ্নিভ প্রাঞ্জন দীপ, আকাশ চন্দ, অভিজীৎ দাস অজিত এবং প্রযোজনা সমন্বয়ক হিসেবে ছিলেন জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মৌলভীবাজার এর কালচারাল অফিসার জ্যোতি সিনহা।
Posted ৯:৩৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad