হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাতে কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকার সম্প্রদায়ের লোকজন। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমানে তাদের তৈরি পণ্য সামগ্রীর বিক্রি তেমন নেই। তারপরও আসন্ন কোরবানির ঈদের কথা ভেবে নতুন আশায় বুক বেঁধে ব্যস্ত সময় পার করছেন লৌহ শিল্পীরা। হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত কামার পাড়াগুলো। ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে এমন ব্যস্ততা। তবে কয়লা, লোহাসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ হয় না তাদের। কিন্তু পূর্ব পুরুষের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন অনেকে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করছেন কামার শিল্পীরা। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছরের খোরাক জোগাড় করেন তারা। অথচ বছরের বেশিরভাগ সময়ই কামার শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বেকার সময় কাটান।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাপাতি, দা, বটি, চাকু, ছুরি তৈরি করা এবং পুরোনোগুলো শান দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। দম ফেলার ফুরসৎ নেই। ঈদ উপলক্ষে লোহার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামার শিল্পীরা। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন সবাই।
কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছরই কোরবানীর ঈদে দা, বটি, ছুরি, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন জিনিসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ মৌসুম ঘিরে ভালো আয়-উপার্জন করে থাকেন তারা। তবে এবার হতাশা ঘিরে ধরেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে একেবারেই বেচাকেনা নেই বলা চলে।
উপজেলার ব্রাহ্মণডুরা বাজারের প্রভাস কর্মকার নামের এক ব্যবসায়ী আক্ষেপের সুরে বলেন, ক্রেতা নেই, তার আবার বেচাকেনা! আর কয়েকদিন পর ঈদ। এই সময়ে লৌহজাত সামগ্রীর বাজার জমে ওঠার কথা। বিক্রি হওয়ার কথা দা-বটি আর ছুরি, অথচ এবার বিক্রিই নেই। ক্রেতারা শুন্য বাজার সারাদিনে দুই তিনটা দা-বটিও বিক্রি হয় না।
উপজেলার পুরানবাজারের বিকাশ দেব বলেন, বছরের এই ঈদ মৌসুমই আমাদের মূল টার্গেট থাকে। বছরের কয়েকটা দিন ভালো টাকাকড়ি, ভালো উপার্জন করার চিন্তা করলে এই দিনগুলা ঘিরেই করা হয়। ভেবেছিলাম কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে বেশি অর্ডার আসবে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন একেবারেই ভিন্ন। উপজেলার ড্রাইভার বাজারের কাঞ্চন চন্দ্র দেব বলেন এখন তাদের আশা ঈদ এগিয়ে আসতে আসতে যদি বিক্রি কিছুটা বাড়ে। সেই লক্ষ্যেই থেমে না থেকে একের পর এক জিনিসপত্র তৈরী করছেন। কিন্তু বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। বাপ দাদার পেশা ছাড়া যায় না। তিনি সরকারি সহযোগীতা কামনা করেন।
এক ক্রেতা জানান, কয়েক দিন পরেই ঈদ। গরু ও ছাগল জবাই দিতে এবং মাংস কাটতে প্রয়োজন চাকু ও ছুরির। সে কারণে বাজারে এসেছি দা, বটি ও ছুরি কিনতে। তবে গতবছরে এসব জিনিসের যে দাম ছিল তার চেয়ে এবারে দাম খানিকটা বেশি।
বর্তমানে প্রতিটি দা তৈরিতে প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২৫০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত। চাকু তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। বড় ছুড়ি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। বটি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা।
Posted ৮:০৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad