রাজনগর প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ নিয়ে নাটকীয়তা শুরু হয়েছে। গত ২৭ আগষ্ট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক পত্রে উপজেলা সভাপতি মো. মিছবাহুদ্দোজাকে অব্যাহতি দিলেও ৮ সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো নোটিশে তাকে ‘সভাপতি’ সম্বোধন করে আরেকটি পত্র দেওয়ায় বিষয়টি নতুন মোড় নিয়েছে। নিজেকে বৈধ সভাপতি দাবী করে বৃহস্পতিবার রাজনগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মো. মিছবাহুদ্দোজা। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের দেয়া অব্যাহতি পত্রকে অবৈধ ও নিজেকে বৈধ সভাপতি দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে মো. মিছবাহুদ্দোজা লিখিত বক্তব্য পেশ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ সুনামের সাথে রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। গত ২৭ আগস্ট কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা ছাড়া মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতিপত্র দেয়া হয়। জেলার সেই পত্র নিয়ে তিনি গত ০৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে দেখা করেন। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তাকে আশ্বস্থ করে বলেছেন, জেলা আওয়ামীলীগের দেয়া অব্যাহতি পত্রটি সঠিক নয় এবং তা কার্যকরও নয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে পদ হতে অব্যাহতি কিংবা অপসারণের এখতিয়ার আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যতিত অন্য কারো নেই। সেই হিসেবে তিনিই রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এখন বহাল আছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে তিনি জানান, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সভাপতি হিসেবে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি সেই সভায় অংশ নেবেন এবং পরবর্তীতে সভাপতি হিসেবে কাউন্সিলে প্রার্থীও হবেন। অন্যতায় তিনি প্রয়োজনে পৃথক বর্ধিত সভা করতে পারেন।
এদিকে গত ০৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত একটি কারণ দর্শাণোর চিঠি বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) হাতে পান মো. মিছবাহুদ্দোজা। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নানাবিধ তৎপরতাসহ সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে কারনে গঠনতন্ত্রের ৪৭ (ক) ধারা অনুযায়ী কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা ২১ কার্যদিবসের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডীস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রেরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। জেলা আওয়ামীলীগের অব্যাহতি দেয়ার ১৬ দিন পর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের এই পত্রকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে তিনি বৈধ সভাপতি আছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবী করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, রাজনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মওলা লুকু, ফতেহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল হোসেন, সহ- সভাপতি ফজর আলীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে জেলা আওয়ামীলীগের পত্রে মো. মিছবাহুদ্দোজাকে অব্যাহতি দেয়ার পর ‘ভারপ্রাপ্ত সভাপতি’র দায়িত্ব পাওয়া আজাদ মিয়া চৌধুরী ইমানি ও সাধারণ সম্পাদক মো. আছকির খানের যৌথ স্বাক্ষরে ১৪ সেপ্টেম্বর বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে। এই সভায় কে সভাপতিত্ব করবেন এনিয়ে চলছে আলোচনা। আর এই মুহুর্তে কে সভাপতি তা নিয়ে সাধারণ নেতাকর্মীরা রয়েছেন দুটানায়।
মনসুরনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফরজান আহমদ বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাথে আলাপ করে বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে। বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব কে করবেন তা ওইদিন বুঝা যাবে। তবে জেলা থেকে বলার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আজাদ মিয়া চৌধুরী ইমানি ও সাধারণ সম্পাদক আছকির খান বর্ধিত সভার পত্র দিয়েছেন।
এব্যাপারে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মৌলভীবাজারের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মিছবাউর রহমান জানান, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত কেবল তাকে অবগত করা হয়েছে। এতে জেলার কোন সিদ্ধান্ত নেই।
Posted ১১:১০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad