মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলের আগে হঠাৎ করে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মিছবাহুদ্দোজাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এনিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে আলোচনা। অব্যাহতি প্রাপ্তের তালিকা আরো দীর্ঘ হতে পারে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিছবাহুর রহমান।
প্রায় ২৫ বছর পর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন আগামী ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলনের আগেই কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সভানেত্রীর কাছে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে গত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় উপজেলা সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে একটি পত্র দেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আছকির খান। ওই পত্র সভাপতির অব্যাহতিকে তরান্নিত করেছে বলেই মনে করছেন দলীয় নেতৃবৃন্দ।
রাজনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬জনের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে একটি তালিকা পাঠানো হয়। কেন্দ্র থেকে দলীয় ‘নৌকা’ প্রতীকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আছকির খানকে প্রতিদ্বন্দীতা করতে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নিজ দলের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দিতা করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন উপজেলা আওয়মীলীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিছবাহুদ্দোজা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ছাতির মিয়া ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান খান। ভোটের দিন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মো. আছকির খান।
এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সম্মেলনের তারিখ দিলেও বর্ধিত সভা আহ্বান করতে গিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। সাধারণ সম্পাদক মো. আছকির খান উপজেলা সভাপতির সঙ্গে বসতে অস্বীকার করেন এবং উপজেলা সভাপতি নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নেত্রীর কাছে করা ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন- উল্ল্যেখ করে দলীয় কোন সভায় তার সঙ্গে বসবেন না বলে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সভানেত্রী বরাবর অভিযোগ দেন।
এদিকে গত ২৫ আগস্ট আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহমদ হোসেন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের ব্যাপারে সংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে জেলা আওয়ামীলীগকে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনার আলোকে জেলা আওয়ামীলীগ গত ২৭ আগস্ট এক পত্রের মাধ্যমে উপজেলা সভাপতি আলহাজ্ব মিছবাহুদ্দোজাকে অব্যাহতি দেয়। একই পত্রে কমিটির ১নং সহ-সভাপতি আজাদ মিয়া চৌধুরী ইমানি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন বলে উল্ল্যেখ করা হয়। এছাড়াও নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কেউ যাতে কোন পদে না আসেন- এব্যাপারেও দলীয় সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে উপজেলা সম্মেলনকে সামনে রেখে পদ প্রত্যাশীরা শুরু করেছেন দৌঁড়ঝাপ। সভাপতি-সম্পাদক পদে বেশ কয়েকজনের নাম শুনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে সভাপতি পদে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজাদ মিয়া চৌধুরী ইমানী, সাধারণ সম্পাদক আছকির খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়ছল আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে যুবলীগের সাবেক সভাপতি মনসুরনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিলন বখত, ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসের নাম নেতাকর্মীদের মুখে শুনা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় ব্যক্তিরাই দায়িত্ব পাবেন বলে প্রত্যাশা করছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।
এব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিছবাহুর রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হওয়ার ব্যাপারে কোনো সংশয় দেখছি না। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাজনগর উপজেলা সভাপতির ন্যায় অন্যদের বেলায়ও পর্যায়ক্রমে দল ব্যবস্থা নেবে। সম্মেলনের ক্ষেত্রে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করবো না। সম্মেলনে আগত কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতেই পদ পূরণ করা হবে।
Posted ১১:৫৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad