শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

যুদ্ধাপরাধী জামিনে এসে শাল্লায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে

মঙ্গলবার, ০৪ আগস্ট ২০২০     158 ভিউ
যুদ্ধাপরাধী জামিনে এসে শাল্লায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে

পি সি দাশ, শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের শাল্লায় যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি জোবায়ের মনির অসুস্থতা দেখিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় এসে নৌবিহার করেছে।

শুধু তাই নয় মামলার বাদী ও সাক্ষীদের বাড়ির সামনে এসে তার বাহিনী নিয়ে আনন্দ ফূর্তির পাশাপাশি হুমকি ধামকি দিয়ে গেছে। এ ঘটনায় এলাকার  মামলার বাদি, সাক্ষী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজনের মধ্যে  আতঙ্ক বিরাজ করছে।  এলাকায় আর্থ-সামাজিকভাবে একক প্রভাবশালী হিসেবে এখনো প্রতিষ্ঠিত জোবায়ের মনিরের পরিবার। যার ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন সবসময় উৎকণ্ঠায় থাকেন।যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সনে ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে জোবায়ের মনির, তার ভাই প্রদীপ মনির ও চাচা মুকিত মনিরসহ যুদ্ধাপরাধে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ দায়ের হয়। ওই বছরের ২১ মার্চ অভিযোগের তদন্তকাজ শুরু করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

দিরাই উপজেলার পেরুয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রজনী দাসের দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সনের ২০ ডিসেম্বর জোবায়ের মনির, জাকির হোসেন, তোতা মিয়া টেইলার, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল জলিল, আব্দুর রশিদসহ অভিযুক্ত ৬ যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ দায়েরের পরই আমেরিকায় পালিয়ে যায় অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী জুনেদ মনির।

যোদ্ধাপরাধী মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত কামরুজ্জামানের আইনজীবী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি শিশির মনিরের বাবা যুদ্ধাপরাধী মুকিত মনির। ২০১৯ সালের ১৭ জুন তদন্ত সংস্থা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জোবায়ের মনিরসহ ১১জন জড়িত বলে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করে।

অভিযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা ১৯৭১ সনে নীরিহ ৩৪ জনকে হত্যা, ৫ জনকে ধর্ষণ, ৩০টি বাড়িঘর অগ্নিসংযোগ, ৩১ জনকে অপহরণ ও ১৪ জনকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে। ওই মামলায় তদন্ত সংস্থা ৩২জনের সাক্ষী নিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেয়। সংস্থাটি জোবায়ের মনিরসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস, তদন্ত সংস্থার কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার ক্রমিক নং ৬৪, তারিখ ২১ মার্চ ২০১৬ আইসিটি বিডি কেস নং ০৫/২০১৮ মামলায় ১৫০ পৃষ্ঠার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে।

এদিকে গ্রেপ্তারের পরেই জোবায়ের মনির নানা ছুতোরতায় জামিনের চেষ্টা করে। অবশেষে গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতকে অসুস্থতার সাজানো তথ্য দিয়ে জোবায়ের মনির ‘টাওন জামিন’ মঞ্জুর করেন আদালত ।

জামিনের শর্তমতে শহরে বাসায় অবস্থানের নির্দেশনা দিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হলেও সুস্থ জোবায়ের মনির এলাকায় নিজ বাহিনী নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।

এবার ঈদুল আজহার আগে শাল্লা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে এসে ঈদের জামাত আদায়সহ একাধিক পশু কোরবানি দিয়েছে। তাছাড়া ঈদের পরদিন স্পিডবোট ও নৌকা নিয়ে নৌবিহার করে আনন্দ ফূর্তি করেছে। তার নৌবিহারের নৌকাটি যুদ্ধাপরাধ মামলার স্বাক্ষীদের বাড়ির কাছে এসে পরোক্ষভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে গেছে। অনেককে প্রলোভন দেখিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে গৃহজামিন নিয়ে বাইরে এসে নৌবিহার, আনন্দভ্রমণ এবং মামলার স্বাক্ষীদের ভয়-ভীতি দেখানোর খবর পেয়ে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইনব্যুনালের সংশ্লিষ্টরা সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবগত করেছে। সংস্থার পক্ষ থেকে শাল্লা থানা ও দিরাই থানার ওসির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে লিখিতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

শাল্লা থানার ওসি সনজুর মোরশেদ বলেন, আমরা শুনেছি যুদ্ধাপরাধী মামলায় গৃহজামিনে থাকা আসামি জোবায়ের মনির ঈদে বাড়িতে এসেছেন। তবে নৌবিহার করেছেন কি না আমরা জানি না। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে লিখিত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করব।

আন্তর্জাতিক অরাধ ট্রাইব্যুনালের এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূর হোসেন বলেন, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে জোবায়ের মনিরসহ ১১ জনের অপরাধের অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছি আমরা। এর মধ্যে ৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। জোবায়ের মনির অসুস্থতার কথা বলে আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় এসে নৌবিহার করেছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার ও দিরাই থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। লিখিতভাবে আমরা এ বিষয়ে জানার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছি জোবায়ের মনির তার বাহিনী নিয়ে মামলার স্বাক্ষীদের ভয়-ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়েছে।

সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ তদন্ত সংস্থা থেকে এ সংক্রান্ত মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। আমি সংশ্লিষ্টদের দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:০৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ আগস্ট ২০২০

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com