কুলাউড়া প্রতিনিধি : কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমএ রহমান আতিকের বিরুদ্ধে সর্বশেষ চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রমাণিত হয়েছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) র তদন্তে। তবে ২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিগত ৪ বছর তিনি নানা অপকর্মের কারণে ছিলেন সমলোচিত। ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান হওয়ায় অনিয়ম দুর্নীতির ক্ষেত্রে তিনি অনেকটা বেপরোয়া। অবশ্য আতিক জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র।
পিবিআর অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পুটিছড়া পানপুঞ্জির বাসিন্দা হামরেজ বারে (৪০) নামক জনৈক খাসিয়ার কাছে পান চাষ ও বিক্রি করতে হলে চেয়ারম্যান এমএ রহমান আতিক ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এরপর ১০ নভেম্বর ওই খাসিয়া ৮০ হাজার এবং ২৪ নভেম্বর আরও ২ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করেন। ৩ লাখ টাকা চাঁদা প্রদানের পরও নিয়মিত চাঁদা দেয়ার হুমকি দেন চেয়ারম্যান। চাঁদা না দিলে খুন করারও হুমকি দেন। চাঁদা প্রদানের আনুমানিক একমাস পর ১৯ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান তাঁর সহযোগি লোকবল নিয়ে পুটিছড়া পুঞ্জিতে গিয়ে ফের চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু হামরেজ বারে খাসিয়া চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাঁর সহযোগিরা পানজুম কেটে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন।
এঘটনার পর হামরেজ বারে মৌলভীবাজার আদালতে একটি পিটিশন মামলা ( নং ৫৭/২০১৯ (কুলাউড়া) ধারা ১৪৩/৪৪৭/৩৪২/৩৮৫/৩৮৬/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ (২)/৩৪) দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর আদালত বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে পিবিআই উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নি:) মো. সাইফুর রহমান সফি গত ১৫ জুলাই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। সেই প্রতিবেদনে (৩৪২/৩৪ ধারা ব্যতিত) ঘটনা প্রমানিত হয়।
এছাড়াও কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে ১ম ও ২য় ধাপে শ্রমিকদের টাকা প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। মুসলিম উদ্দিন নামক প্রকল্পের শ্রমিক ২০১৭ সালের ১২ জুলাই কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট সোলার দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেন ইউনিয়নের বাড়–য়াকান্দি গ্রামের লোকমান আহমদ। একই অভিযোগ কর্মধা গ্রামের ছাতির আলীর স্ত্রী মিলজান বেগমের। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে দরিদ্র অঞ্চলের মানুষের মাঝে বিতরণ করার জন্য একটি গভীর নলকূপ ও একটি রিং টিউবওয়েল কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদকে বরাদ্ধ দেয়া হয়। সেই নলকূপটি তাঁর বড় ভাইয়ের নামে বরাদ্ধ দেখিয়ে নিজ বাড়িতে স্থাপন করেন।
স্থানীয় লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর এসব অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকায় কিনেছেন দামি গাড়ী। যা তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে মোবাইল ফোনে কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমএ রহমান আতিকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সত্য নয়। সামাজিক বনায়নে খাসিয়ারা বাঁধা দেয়। তিনি বনবিভাগের পক্ষে সামাজিক বানয়ন বাস্তবায়নে কাজ করায় ষড়যন্ত্র মুলকভাবে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে পিবিআইকে ম্যানেজ করে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।
চেয়ারম্যানের অভিযোগ প্রসঙ্গে পিবিআই উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নি:) মো. সাইফুর রহমান সফি জানান, আসামীরা কত কিছুই বলে। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সত্য না মিথ্যা আপনারাও তদন্ত করে দেখতে পারেন।
Posted ১:৫০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad