বুধবার ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস 

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৯     402 ভিউ
হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস 

মোঃ আব্দুর রকিব,  হবিগঞ্জ থেকে : শায়েস্তাগঞ্জসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ জনপদ থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। এর সাথে পাল্লাদিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস ও গাছি নামক শিল্পীরা। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ অনুভূত হলেও প্রকৃত শীত আসতে এখনো কিছুটা বাকি আছে। ঐতিহ্যগতভাবে শীতের ভোরে একগ্লাস খেজুরের রস পান করতে ইচ্ছা জাগে রস প্রেমিকদের।

গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যের বাহক এই মধুবৃক্ষ তুলনামূলকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। গ্রামে মাঠের ধারে মেঠোপথের কিনারে অথবা ঘরের কোনে খেজুরগাছ দাঁড়িয়ে থাকতে আর দেখা যায়না। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই খেজুরগাছ আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। কারন যে হারে খেজুরগাছ নিধন করা হচ্ছে সে তুলনায় রোপণ করা হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে দু’একটি খেজুরগাছ দাড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। শীত মৌসুমের সকালে খেজুরের তাজা রস ও রসে ডুবানো পিঠার স্বাদ আর মৌ-মৌ ঘ্রাণ যে কতটা মধুর তা বলে শেষ করা যাবেনা।

উপজেলার খোয়াই নদী সংলগ্ন কলিমনগর গ্রামের আলেয়া বেগম জানান, এলাকায় গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এক সময় এই এলাকায় প্রচুর খেজুরগাছ ছিল, অনেক রসও পাওয়া যেতো। এখন খেজুরগাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সাথেসাথে পেশাদার গাছি শিল্পীরা অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় তাদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। শীত মৌসুমের শুরুতে গ্রামাঞ্চলে খেজুর গাছের রস আহরণের কাজে পেশাদার গাছিদের আর দেখা যায়না।

এই এলাকার গাছি বাবুল মিয়া জানান, খেজুরগাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতে পারতেন। আগে যে আয় রোজগার হতো তাতে সংসার চালিয়ে কিছু সঞ্চয়ও করা যেতো। এখন গ্রামে যে কয়েকটা খেজুর গাছ আছে তা বেশী বয়সের হওয়ায় তাতে তেমন রস পাওয়া যায় না। এক সময় এক হাড়ি খেজুর রস বিক্রি হতো ১০০ টাকায় এখন খেজুরগাছ কমে যাওয়ায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার দাউদনগরের বাসিন্দা তাফসির চৌধুরী জানান, তার বাড়িতে খেজুরগাছ আছে। নিজের খেজুরগাছের রস খাওয়ার আশায় গতবছর থেকে গাছি খোঁজছেন কিন্তু পাচ্ছেন না।

দাউদনগর বাজারের গুড় ব্যবসায়ী মোঃ আলী বলেন, এখন শীত মৌসুমের ভোরে একগ্লাস তাজা খেজুরের রস পাওয়া না গেলেও খেজুরসে তৈরি পাটালী গুড়, ঝোলা গুড়, মরিচা গুড় ইত্যাদি এখনও পাওয়া যাচ্ছে। দেশের যশোর, ঝিনাইদহ এবং ফরিদপুর অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ খেজুর গাছ দেখা যায়। ওইসব এলাকায় বনিজ্যিকভাবে খেজুরের রস থেকে বিভিন্ন প্রকারের গুড় উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এই উৎপাদিত গুড় মৌসুমে সারাদেশে প্রেরণ করা হয়।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরস এবং রসে তৈরি নানান প্রকারের সুস্বাদু ও সুগন্ধি গুড়কে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। এর অংশ হিসেবে বিদ্যমান খেজুরগাছের সঠিক পরিচর্যার পাশাপাশি নতুন করে খে‍জুরগাছ রোপন করা জরুরী বলে মনে করেন এলাকার পরিবেশ সচেতন লোকজন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৩৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৯

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com