মঙ্গলবার ৩০শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যের হারিকেন 

শনিবার, ০৪ জুলাই ২০২০     1286 ভিউ
হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যের হারিকেন 

মোঃ আব্দুর রকিব : হারিকেন হচ্ছে কেরোসিনকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে কাঁচের চিমনির ভিতরে সলতের মাধ্যমে আগুন জ্বেলে আলো প্রাপ্তির ব্যবস্থা। এক সময়ে এ হারিকেনের আলোই ছিল পল্লীবাংলার ঘরে ঘরে অন্ধকার দূরীকরনের একমাত্র উৎস।

একটি হারিকেনের দুইটি অংশ থাকে এর বাহিরের অংশে থাকা বৃত্তাকার কাঁচের অংশকে চিমনি বলা হয় এবং  ভিতরে থাকা সুতার তৈরী ফিতা কেরোসিন শোষণ করে অগ্নি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আলো বিকিরণ করার অংশকে সলতে বলা হয়। এ সলতেকে একটি চাবি দিয়ে উঠানো নামানোর মাধ্যমে প্রয়োজন মতো আলো হ্রাস বৃদ্ধির ব্যবস্থাও ছিল।

গ্রামাঞ্চলে এর ব্যবহার সর্বাধিক তবে এখনো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিহীন গ্রামাঞ্চলে আলোর উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই হারিকেন। হারিকেনের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় আরেকটি আলোর উৎস ছিল কেরোসিন শিখা বা মাটির প্রদীপ। এটি উন্মুক্ত ছোট ধাতব বা মাটির কৌটায় কেরোসিন দিয়ে উপরে সরু সলতের মাধ্যমে আগুন জ্বেলে তার থেকে আলো ও আগুন দু’টোই পাওয়া যেতো। যে কারনে মাটির প্রদীপটি সাধারণত রান্নাঘরে ব্যবহার করা হতো।

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কাজ আরম্ভ করে। এর জন্য বিআরইবি দেশে অসংখ্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গঠনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে। মূলত দেশে পল্লী বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে পল্লীর জনপদ থেকে হারিকেনের ব্যবহার হারিয়ে যেতে থাকে।

গ্রাম্য জনপদে বিদ্যুৎ প্রাপ্তির সাথে-সাথে চার্জ লাইট এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। আধুনিকতার উৎকর্ষে বিদ্যুতের পাশাপাশি চার্জ লাইটের প্রচলন এবং এর সহজলভ্যতা মানুষকে প্রলুব্ধ করেছে। এতে চার্জ লাইটের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়ে হারিকেনের বিলুপ্তিকে তরান্বিত করেছে। চার্জারের সহজলভ্যতা এবং ব্যবহারে নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় এর চাহিদা এখন আকাশচুম্বি।

এক সময় রাত-বিরাতে হারিকেন হাতে ডাকপিয়ন ছুটে চলতো গ্রামের পথে ডাক ব্যাগ নিয়ে। গ্রামের লোকজন রাতে ঘরের বাইরে যেতে হলে হারিকেনের বিকল্প ছিলনা। তাই তখনকার সময়ে হারিকেনকে রাত্রিকালীন বন্ধু হিসাবে ভাবা হতো।হারিকেনের আলোয় গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনে ব্যবহার করা হতো।

রেল স্টেশনে ও গাড়িতে ফেরিওয়ালারা কেরোসিন বাতির সাহায্যে সানন্দে তাদের রোজগারের কাজটি করতো। কালের বিবর্তনে বাজারে ড্রাইসেলের আধুনিক টর্চলাইটের ব্যবহার বাড়তে থাকায় হ্রাস পেতে থাকে বহিরাঙ্গনে হারিকেনের ব্যবহার। তবে এখনো গ্রামাঞ্চলে মাঝে-মাঝে রিক্সার নীচে হারিকেন বেঁধে চলাচল করতে দেখা যায়। কিছুদিন আগেও শহরের রাস্তায় হারিকেন ছাড়া রিক্সা চালাচল করলে জরিমানা করা হতো।

পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবহার করে গ্রামে বসবাস করেন জনৈক কামাল হোসেন, এ ব্যাপারে ক্ষোভের সাথে বলেন, উনার বাপ-দাদা হারিকেনের আলোতে পড়াশোনা করেছেন। উনারা অশীতিপর হয়েও পড়াশোনা করতে মৃত্যু অবধি চশমা ব্যবহার করতে হয়নি। এটা হারিকেনের অসামান্য অবদান। এখন প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদেরও চশমা ব্যবহার করতে দেখা যায়।

বিদ্যুত থাকা না-থাকা দো’টানার ভেল্কিবাজীতে অতিষ্ঠ হয়ে তানভীর বলেন, গোটা পৃথিবী এখন শতভাগ বিদ্যুৎ শক্তির উপর নির্ভরশীল। বিদ্যুতবিহীন জীবনাচরণ ভাবাই যায় না। তা না হলে হারিকেনই ভাল ছিল।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:৫৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ জুলাই ২০২০

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com