হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব এডভোকেট মোঃ আব্দুল মজিদ খান এমপি বলেন ,জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। বৃহস্পতিবার বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি একথাগুলো বলেন।
তিনি আরো বলেন, শোকাবহ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি ও বাংলাদেশের শোকের দিন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এ দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূসহ নিকট আত্মীয়গণ শাহাদাত বরণ করেন। তিনি শোকাহত চিত্তে তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। জাতীয় শোক দিবসে পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
তিনি আরো বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এক কলঙ্কিত অধ্যায়। দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হন। একই সঙ্গে শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, সহোদর শেখ নাসের, কৃষকনেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত, যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, বেবী সেরনিয়াবাত, সুকান্ত বাবু, আরিফ এবং আব্দুল নঈম খান রিন্টু। এ নৃশংস ঘটনা কেবল আমাদের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। শুধুমাত্র একজন রাষ্ট্রনায়ককে হত্যা করা নয় বরং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা এবং পরাজিত শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করাই ছিল হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৬ এর ৬-দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এ জন্য তাঁকে জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে; সহ্য করতে হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি কখনো আপোস করেননি।
এ মহান নেতার চিন্তা-চেতনায় সবসময় কাজ করত বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ। তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য আজ এ দেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে। ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। যতদিন বাংলাদেশ ও বাঙালি থাকবে ততদিন জাতির পিতার নাম এ দেশের লাখো-কোটি বাঙালির অন্তরে চির অমলিন, অক্ষয় হয়ে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। সদ্যস্বাধীন দেশকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে তিনি সে কাজ শুরুও করেছিলেন। কিন্তু ঘাতকচক্র নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তা স্তব্ধ করে দেয়। তাই সকলের দায়িত্ব হবে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করা। তাহলেই চিরঞ্জীব এই মহান নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে।
বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মামুন খন্দকার এর সভাপতিত্বে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাওসার শোকরানার পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভুমি) সাব্বির আহমেদ আখঞ্জী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমীর হোসেন মাস্টার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণসম্পাদক তজম্মুল হক চৌধুরী, , উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা আক্তার প্রমুখ। আলোচনা সভার পূর্বে বড়বাজারস্থ জাতির পিতার বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় উপজেলা প্রশাসন, বানিয়াচং থানা ,উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ,পল্লী বিদ্যুত সমিতি বানিয়াচং যোনাল অফিস, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থীবৃন্দ। শ্রদ্ধাঞ্জলী দেয়ার পরপরই এ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি’র নেতৃত্বে বিশাল একটি শোক র্যালী বড়বাজার প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ মাঠে এসে শেষ হয়।
Posted ৬:২৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad