পি সি দাশ, শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের শাল্লায় সদ্য নির্মিত ভবনটির আয়ুষ্কাল ১০০ বছর নির্ধারিত ছিল । সেই অনুযায়ী নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় দুই-ই হয়েছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, দুই বছরের মধ্যেই ভবনটি বিধ্বস্ত হতে শুরু করেছে। আরও অবাক কান্ড হল, যে ভবনটির কথা বলা হচ্ছে সেই ভবনটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনই করা হয়নি।
প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শাল্লা গণমিলনায়তনটি উদ্বোধনের আগেই বারান্দা নেমে গেছে। ভবনের পুর্ব দিকের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। ভবনের বারান্দার ১৮ টি পিলার ১৪ ইঞ্চি উপরে শূন্যে রয়েছে। ৫৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৫৫ ফুট প্রস্তের এই ভবনটি ব্যবহার করতেই ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা।
Exif_JPEG_420
হাওরের তলানীর উপজেলা শাল্লায় বড় কোন অনুষ্ঠান করার মতো মিলনায়তন ছিল না। স্থানীয় জনসাধারণের দাবি’র প্রেক্ষিতে শাল্লার প্রয়াত সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট পার্লামেন্টালিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত’এর প্রচেষ্টায় শাল্লা উপজেলা পরিষদ ভবন ও গণমিলনায়তনের বরাদ্দ হয়। তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় এই দুই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন।
২০১৫ সালের তিন সেপ্টেম্বর থেকে এই ভবন দুটি’র জয়েন্ট বেঞ্চারে কাজ শুরু করে এলজিইডি’র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেবি, কাজী সিরাজুল ইসলাম ও মেসার্স আর এস কনস্ট্রাকসন। ভবন দুটি’র প্রাক্কলিত ব্যয় ৫ কোটি ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩১৮ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ হলেও পুনঃপ্রাক্কলন শেষে ভবন নির্মাণ কাজের বিল উত্তোলন হয় ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ২৮ টাকা ৬ পয়সা।
এরমধ্যে ৮০ ফুট দৈর্ঘ ও ৬০ ফুট প্রশস্তের ৪ তলা উপজেলা পরিষদ ভবন এবং ৫৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৪০ ফুট প্রস্তের এক তলা গণমিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। গণমিলনায়তনের বরাদ্দ ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর ভবন দুটির কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও ২০১৮ সালের ৩ মার্চ ভবন দুটির কাজ শেষ হয়। এই দুটি ভবনের উদ্বোধন এখনো হয় নি। তবে ভবনগুলোর ব্যবহার শুরু হয়েছে ।
শাল্লার সাংস্কৃতিক সংগঠক ইন্দ্রজিৎ দাস বললেন, এই মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করতে রীতিমত ভয় হয়। কখন যে কোন দিকে ধসে পড়ে। তিনি জানালেন, ভবনের ছাদের পানি পাইপ দিয়ে বাইরের দিকে না দিয়ে বারান্দায় ফেলা হচ্ছে। এটি কেমন ডিজাইন হলো। আমাদের মনে হচ্ছে এটি কারিগরি ত্রুটি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস ছত্তার বলেন, গর্ত ভরাট করে ভবন হয়েছে। নির্মাণ কাজেও ত্রুটি হতে পারে। না হয় এতো বড় ফাটল দেখা দিতো না।
শাল্লা উপজেলা প্রকৌশল অফিসে কর্মরত উপসহকারী প্রকৌশলী নুরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আসার আগে ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। বিল জামানত দুটোই ঠিকাদার নিয়ে গেছেন। আমি এর বেশি কোন তথ্য দিতে পারবে না।
শাল্লার উপজেলা প্রকৌশলী’র অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন পাশের দিরাই উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইফতেখার হোসেন। তিনি জানালেন, ভবনটি এভাবে দেবে যাবার বিষয়টি আমাকে কেউ জানায় নি। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখবো নির্মাণ সময়ে কী কী ত্রুটি হয়েছিল। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
শাল্লা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী বলেন, মিলনায়তনের চতুর্দিকের বারান্দা দেবে গেছে। দেওয়ালে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল অংশে একবার সংস্কার করা হয়েছে। সেই অংশে আবার ফাটল ধরেছে। মঞ্চ দেবে গেছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ কী না, তা দেখা জরুরি।
Posted ৫:৪৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad