রাজনগর প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের রাজনগরে সামাজিক সংগঠনের আড়ালে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের সঞ্চয়ের প্রায় ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রতারকচক্র। সমাজসেবা অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে সঞ্চয় ও ঋণ কার্যক্রম চালানোর সুযোগ না থাকলেও ৬ বছর মেয়াদে টাকা দ্বিগুন করার নামে প্রায় দুই শতাধিক সদস্যের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করেছে তারা। অনেকে মেয়াদ শেষে এখন টাকা ফেরত চাইতে গেলে টালবাহানা করেছে সংস্থাটির নেতারা। এ অভিযোগে ভুক্তভোগী একজন মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। আত্মসাৎকারীরা আদালতে জামিন চাইতে গেলে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজহার ও কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘মানব উন্নয়ন সামাজিক সংস্থা (মাউসস)’ নামে একটি সংস্থা ২০১৭ সালে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় হতে নিবন্ধন (নং-৪৩৬) করা হয়। সংস্থার সভাপতি-সম্পাদক পরিচয়ে রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুশরিয়া গ্রামের বাতির মিয়ার ছেলে ময়জুল হক ও একই উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের চাটুরা গ্রামের সমরেন্দ্র দেবের ছেলে মৌলভীবাজার গণপূর্ত বিভাগে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত স্বপন দেব ২০১১ সালে একই উপজেলার শ্বাসমহল গ্রামে উঠান বৈঠক করে ২৭ জন সদস্য নিয়ে ওই সংস্থার ‘গ্রাম সংগঠন’ গড়ে তুলেন। ঋণ দেয়া হবে বলে সদস্যসের কাছ থেকে মাসিক ও বাৎসরিক বিভিন্ন পরিমাণে সঞ্চয় সংগ্রহ করে। ৬ বছর মেয়াদ পূর্তিতে সঞ্চিত টাকার মুনাফাসহ দ্বিগুন টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে তাদেরকে ফাঁদে ফেলে তারা। সদস্যদের কারো ২০১৬ সালে আবার কারো ২০১৭ সালে মেয়াদ শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে দৌড়ঝাঁপ করেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
সম্প্রতি সঞ্চয়ের মেয়াদ শেষ হলে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিতে সংস্থার অফিসে যান সংস্থার শ্বাসমহল গ্রাম সংগঠনের সদস্য অজয় দত্ত। এসময় তাকে আরো এক লক্ষ টাকা সঞ্চয় জমা দিলে ৪ লক্ষ টাকা ঋণ দেয়া হবে বলে ‘মাউসস’ এর ময়জুল হক ও স্বপন দেব জানান। তিনি ওই টাকা সঞ্চয় করার পর শীঘ্রই তাকে ঋণ দেয়া হবে বলে কয়েকদফা সময় নেন তারা। একই গ্রামের অন্য সদস্যদের মেয়াদপূর্তি হলে তারাও রাজনগর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ‘মাউসস’ এর কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। এসময় তাদের টাকা ফেরত দিতেও নানা অজুহাত দেখায় তারা। এঘটনায় প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে শ্বাসমহল গ্রামের অজয় দত্ত গত ১৮ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা (নং- সি.আর ১৭৩/২০১৯; রাজঃ) দায়ের করেন। ওইদিনই আদালত তাদের বিরোদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর আসামী ময়জুল হক ও স্বপন দেব আদালতে জামিন নিতে গেলে তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
এদিকে সারা উপজেলায় বিভিন্ন কৌশলে গ্রাম সংগঠন করে ২ শতাধিক সদস্য তৈরি করে ‘মাউসস’। রাজনগর কার্যালয়ে সেলাই প্রশিক্ষণের নামে বিভিন্ন এলকার নারীদের টার্গেট করে সদস্য করা হয়। এসব সদস্যের কাছ থেকে মাসিক ও বার্ষিক কিস্তিতে বিভিন্ন হারে সঞ্চয় সংগ্রহ করা হয়। এ থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই প্রতারকচক্র।
শ্বাসমহল গ্রাম সংগঠনের সদস্য শিবানী রানী দে বলেন, আমি বার্ষিক ৬,২৪০ টাকা হারে ৬ বছর সঞ্চয় করি। ২০১৬ সালে মেয়াদ শেষ হলে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা নানা অজুহাত দেখাতে শুরু করে। পরিবারের শেষ সঞ্চয়ের টাকাগুলো পাবো কিনা তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ বলেন, গত ২০১৭ সালে তাদের সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি তারা অনুদানের আবেদন করলে আমরা জেলা অফিসকে তাদের কমিটি ও অডিট রিপোর্ট না পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি।
জেলা সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক আদিল মোত্তাকিন বলেন, সমাজসেবার নিবন্ধনের ঋণ কার্যক্রম চালানোর কোনো সুযোগ নেই। কেউ এটা করে থাকলে অবৈধ হয়েছে। এব্যাপারে আমি কোনো অভিযোগ পাইনি।
Posted ৪:৪৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad