জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া : সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আসা খর¯্রােতা মনু নদীর ভাঙনের নেপথ্যে ৬৭ বিশাল বাঁককে দায়ী করা চলে। বিশাল আকৃতির ইউ টার্ন প্রকৃতির একেকটি বাঁক নদীর গতি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে খুব সহজে তীব্র খর¯্রােতা মনু নদীতে বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি হয় ভাঙন। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে ইতোমধ্যে নদী শাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নদীর বাঁক ও প্রতিরক্ষা বাঁধের বিষয়টিও পরিকল্পনায় রয়েছে।
মনু পাড়ের হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু জানান, নদীর বিশাল বাঁকের কারণেই চলতি বন্যা মৌসুমে হাজীপুরের কাউকাপন বাজারটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে অর্ধশত দোকানপাটের কোন চিহ্নও নেই। সেই সাথে মনু রেলস্টেশন হতে কটারকোনা বাজারের রাস্তায় হাসিমপুর এলাকায় ভাঙনের ফলে ২ মাস থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এখনও পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ চালু হয়নি।
বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতির সভাপতি কমরেড মোশাররফ আলী জানান, নদীর বাঁকের কারণে প্রতিবছর ধলিয়া বেলেতল নামক স্থানে ভাঙণের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় ছৈদল বাজারও মুলত মনু নদীর বিশাল বাঁকের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে।
শুধু এই ২-৩টি বাঁক নয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু শুরু হওয়া মনু নদীর শেষসীমা মনু মুখ পর্যন্ত রয়েছে ৬৭ টি বিশাল বাঁক। আর এসব বাঁকের কারণে মুন নদীর গতি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হয়। ফলে পানির চাপ বাড়ে তীব্র আকারে। লন্ডভন্ড হয়ে যায় প্রতিরক্ষা বাঁধ।
২০১৮ সালে ১৩ জুন উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ১৫টি ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর, শরীফপুর, পুথিমপাশা, টিলাগাঁও ইউনিয়ন এবং রাজনগর উপজেলার কামারচাক, টেংরা ও মনসুরনগর এবং মৌলভীবাজার সদর উপজেলা মুনমুখ ইউনিয়ননের রাস্তাঘাট লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কুলাউড়ার চাতলাপুর স্থলবন্দরের সড়কে দুরবস্থার কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমাদানি রফতানি বন্ধ ছিলো দীর্ঘদিন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনে দাবি মনু নদীর ভাঙন কবলিত স্থানগুলো ব্লক দিয়ে মেরামত এবং নদীর বিশালাকারের বাঁকগুলো যতটা সম্ভব সোজা করার। এতে মনুর স্রোতে পানি প্রবাহে চাপ খুব একটা পড়বে না। ফলে খুব সহজে ভাঙনের সৃষ্টি হবে না।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র চক্রবর্তী জানান, মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁকে সিসিব্লক দ্বারা স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের জন্য এক হাজার দুই কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। আগামী অক্টোবর নভেম্বর নাগাদ প্রকল্পটি অনুমোদনের আশা করা যাচ্ছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে সিসি ব্লকের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকা থেকে মনু মুখ পর্যন্ত ৬৭টি বাঁকেও কাজ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মনু নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। ফলে খুব সহজে ভাঙনের সৃস্টি হবে না।
Posted ১১:৩৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad