মখলিছ মিয়া, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) থেকে ॥ হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় পৃথক তিনটি ঘটনায় একদিনে ৩টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসকল ঘটনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি। ঘটনা ৩টি ঘটেছে ২২জুলাই বুধবার। প্রথম ঘটনায় প্রতিবেশিদের ধাক্কা ও কিল-ঘুষিতে মারা যান বৃদ্ধা মহিলা কমলা বিবি(৫৫)। দ্বিতীয় ঘটনায় আততায়ীর হামলায় মারা যান বড়উউড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা কামাল মিয়া(৩৫) তৃতীয় ঘটনায় ছোট ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন বড় ভাই আলী আকবর(৩৫)।
প্রথম খুনের ঘটনাটি ঘটেছে ৩নং ইউনিয়নের দেশমূখ্য পাড়ায় বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায়। নৌকা ঘাটে নৌকা বাধার ঘটনায় তর্ক-বিতর্কের কারনে নিহতের পুত্রবধূ জমিলা খাতুনকে প্রতিবেশি লুকু মিয়া ও তার লোকজন মারপিট করে আহত করে। এ সময় পুত্রবধূকে বাচাতে গিয়ে লুকু মিয়া ও তার লোকজন কমলা বিবিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে কিল-ঘুষি মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বানিয়াচং স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ পেয়ে বানিয়াচং থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছে। এবং রাতেই লাশের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোন মামলা দায়ের করা না হলেও , অভিযুক্ত কাউকে আটক করা হয় নাই।
দ্বিতীয় খুনের ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় উপজেলার ৭নং বউইউড়ি ইউনিয়নের শিবগঞ্জ বাজার হাসপাতালের পাশে। নিহত কামাল মিয়া ঐ ইউনিয়নের হলদারপুর গ্রামের আব্দুল মন্নাফের পুত্র। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এলাকাবাসী জানান নিহত কামাল মিয়া বুধবার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন পাশর্^বর্তী নবীগঞ্জ উপজেলার এক আত্মীয়ের জানাজার নামায পড়তে। সন্ধ্যা ৬টায় বাড়িতে ফেরার পথে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা আততায়ীরা কুপিয়ে রক্তাক্ত জহম করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে রাত সাড়ে ১১টায় কামাল মিয়া মারা যান। এ ঘটনায় কোন মামলা দায়ের করা হয় নি।
তৃতীয় খুনের ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাত ১১টায় উপজেলার ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নের বড়বাজার শহীদ মিনার এলাকায়। নিহত আলী আকবর ঐ ইউনিয়নের চতুরঙ্গরায়ের পাড়ার ইউনুস মিয়ার পুত্র। এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিনের ন্যায় মানসিক ভারসাম্যহীন ছোট ভাই আলী নেওয়াজকে খুজতে বের হয় বড় ভাই আলী আকবর। অন্যান্য দিনের মত বাড়িতে যাওয়ার কথা বলতেই তর্ক বেধে যায় দুই ভাইয়ের মধ্যে। এক পর্যায়ে ছোট ভাই আলী নেওয়াজ ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই আলী আকবরকে ছুরিবিদ্ধ করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে বানিয়াচং থানা পুলিশ আলী আকবরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরন করে। পথিমধ্যেই রাত সাড়ে ১২টায় আলী আকবর মারা যান।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানা ইনচার্জ মোহাম্মদ এমরান হোসেন ঘটনার সত্যতা স¦ীকার করে জানান, ঘটনা তিনটির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয় নাই। অভিযুক্তদের আটক করতে থানা পুলিশ কাজ করছে। এদিকে ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) শেখ মোঃ সেলিম পৃথক পৃথকভাবে ৩টি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, ৩টি ঘটনার মধ্যে ১টি হচ্ছে প্রতিবদ্ধী ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, অপরটি ১জন প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১জন মহিলা স্ট্রোক করে মারা গেছে, বিষয়টি হবিগঞ্জ হাসপাতালের দায়িত্বরত একজন ডাক্তার এ বিষয়ে প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতা কামাল হত্যার ঘটনায় তিনি বলেন, ঘটনাস্থল নবীগঞ্জ হওয়ায় মামলাসহ সব কার্যক্রম হবে নবীগঞ্জ থানায়, তারপরও আমরা এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে সকল প্রকার সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
Posted ৮:৪৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad