মোঃ আব্দুর রকিব, হবিগঞ্জ : পৃথিবীর বিশাল কর্মশালায় মানুষ বিভিন্ন পথে অগ্রসর হয়। আর সে যেমন পরিশ্রম করে তেমনি ফল পায়। এমনই একজন মানুষ মোঃ আহমেদ আলী। হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার মিরপুর দ্বিমুড়া গ্রামের একজন ক্ষুদে দোকানদার। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন সয়ল সবজি চাষি।
প্রায় ৩ একর জমিতে সারা বছর সীম, লাউ, কুমড়া, চিচিংগা, ঝিঙগা টমেটো আর বিভিন্ন রকমের শাক সবজি চাষ তার নেশা এবং পেশা। সেই ছেলে বেলায় বাবার হাত ধরে নেমেছিলেন চাষের জমিতে। এখন তিনি যুবক। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন সবজি ফলানো এখন তার জীবনের অংশ। এবারো আহমেদ আলী ফলিয়েছেন লোভনীয় সবজি লাউ। প্রায় ৯শতক জমির উপর মাচা বেঁধে শায়েস্তাগঞ্জ মিরপুর সড়কের বামপাশে আব্দুল্লাপুর নামক স্থানে ওই লাউ বাগান। সহজেই পথচারী ও যাত্রীসাধারণের দৃষ্টি কাড়ে।
সরজমিনে দেখাযায়, ৯ শতক জমির উপর গড়ে তোলা মাচায় প্রায় ৭/৮ শত লাউ ঝুলছে। বাতাসে মৃদু দুলছে। পরিচর্যায় ব্যস্ত আহমেদ আলী। আশে পাশে উৎসুক দর্শনার্থী। এমন পরিস্থিতিতে কথা হলো আহমেদ আলীর সাথে। জানালেন, ছোটবেলা থেকেই সবজি চাষে তার নেশা। পরবর্তীতে তা পেশা হয়ে যায়। এখন তিনি তার গ্রামে এবং এলাকায় একজন আদর্শ সবজি চাষি ।
ভরা বর্ষায় শীতের সবজি লাউ কিকরে ফলানো হলো? প্রশ্ন করতেই আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিলেন সুঠাম দেহের অধিকারী একজন মানুষকে। কথা হলো তাঁর সাথে, তিনি তাপস চক্রবর্তী। বিভাগীয় ম্যানেজার, লাল তীর সিড লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের বীজের প্রচারনা করতে গিয়েই পরিচয় আহমেদ আলী সাথে। মনে ধরলো এ সবজি চাষিকে। এর পর থেকে গভীর সম্পর্ক। কর্মরত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে অল্প পরিশ্রমে বেশি ফলনের কৌশল শিখিয়ে দেন আহমেদ আলীকে।
আহমেদ আলী তাপস বাবুর পরামর্শে ভালো ফলন পাচ্ছেন বলে খুব খুশি। জমিতে কী প্রয়োগ করে এতো ভালো ফলন হলো? জানতে চাইলে আহমেদ আলী জানালেন সহজলভ্য গোরব বেশি পরিমানে আর এর সাথে অল্প পরিমানে বেঙ্গল সার। এ দুয়ের সংমিশ্রনেই এমন বাম্পার ফলন সম্ভব হয়েছে। তবে আহমেদ আলীর মতে, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ধৈর্য ধরে জমি আর ফসলের পরিচর্যা করাই এমন ফলনের মূল রহস্য।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৩ শ’র মতো লাউ বিক্রি করেছেন। জমিতে আরো ৭-৮শ আছে। এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে এ শ্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতে আহমেদ আলী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর পরিশ্রমে ধন আনে নীতিতে নিজের জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে বদ্ধ পরিকর তিনি। কেমন লাগছে প্রশ্ন করতে জানালেন, খুব ভালো, এই যে উৎসুক দর্শক, পথচারীর উৎসাহ, পাড়া প্রতিবেশীর বাহবা এসবে নিজেকে বেশ গর্বিত কৃষক বলেই মনে হয়। আহমেদ আলীর একটা আফসোস যে, বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেননি। আরো একটু শিক্ষিত হলে বোধহয় আরো ভালো চাষি হওয়া যেতো এমন ধারনা তাঁর। তবে বর্তমান অবস্থায় তিনি একজন সুখী মানুষ বলেই জানালেন। আর একজন আদর্শ কৃষক হিসেবেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাঁচতে চান আহমেদ আলী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সজল দেব জানান, তিনি সত্যিই একজন আদর্শবান কৃষক। বর্তমান করোনা কালীন সময়ে তাদের যথাযত পরামর্শ এবং লাল তীরের সহযোগিতায় ডায়না জাতের লাউ চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসতেছি কৃষি এবং সবজি উৎপাদনের জন্য ।
Posted ৩:১০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad