মঙ্গলবার ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নৌ-পথে বেপরোয়া চাঁদাবাজী! ছাতকে পাথর-বালূু ব্যবসায় ধ্বস

বিজয় রায়, ছাতক প্রতিনিধি:   শুক্রবার, ০৯ আগস্ট ২০১৯     362 ভিউ
নৌ-পথে বেপরোয়া চাঁদাবাজী! ছাতকে পাথর-বালূু ব্যবসায় ধ্বস

এসব নৌকা ষ্টিমার লঞ্চ থেকে অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে চাঁদাবাজী। ছাব- সিলেটের জনপদ

ছাতকের বিভিন্ন নৌ-পথে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজী। নৌ-পথে চলমান মাল বোঝাই নৌ-যান থেকে স্থানীয় চাঁদাবাজরা অবাদে চাঁদাবাজী করে যাচ্ছে। সুরমা, চেলা, পিয়াইন ও সোনাই নদীতে চাঁদাবাজী নিয়ে গত ৫ আগস্ট উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। চাঁদাবাজী বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে-মধ্যে অভিযান চালালেও এসব নৌ-পথে চাঁদাবাজী বন্ধ হয়নি। এখানে অন্তত ১০-১২টি গ্রুপ বিভিন্ন সমিতি-সংস্থার নাম ব্যবহার করে অবৈধভাবে নৌ-পথে চলামান বার্জ, কার্গো, বাল্কহেড ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

নৌ-পথে চাঁদাবাজী বন্ধে ছাতকের ব্যবসায়ী মহল বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেও ব্যর্থ হয়েছেন। সাধারণ মানুষের ধারণা আইন-শৃঙ্ঘলা বাহিনীর  সাথে আতত করে চাঁদাবাজরা প্রকাশ্যেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ চাঁদাবাজী। মাঝে-মধ্যে নদীতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ দু’একজন চাঁদাবাজদের আটক করলেও বিভিন্ন মহলের তদবিরে থানা থেকেই তাদের ছেড়ে দিতে দেখা গেছে।

মুল চাঁদাবাজরা নদীপথে চাঁদা আদায়ের জন্য লোক নিয়োগ দিয়ে থাকে। আর এসব ডে লেবাররাই পুলিশি অভিযানের শিকার হচ্ছে। ফলে মুল চাঁদাবাজরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। বেপরোয়া চাঁদাবাজদের কাছে অনেকটা অসহায় হয়েই নৌ-যান শ্রমিকরা তাদের ধার্যকৃত চাঁদা পরিশোধে বাধ্য হচ্ছে।

প্রায় দু’বছর আগে চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় সুরমা নদীতে চাঁদাবাজদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে এক নৌ-শ্রমিককে। বহু নৌ-শ্রমিক তাদের হাতে আহত ও লাঞ্চিত হয়েছে। এদিকে চাঁদাবাজরা বৈধভাবে রশিদ দিয়ে চাঁদা আদায় করছে বলে দাবী করে যাচ্ছে। তবে বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজরা একে অপরকে অবৈধ চাঁদাবাজ বলে দাবী করে পুলিশে ধরিয়ে দিচ্ছে। এসব চাঁদাবাজদের কারনে বৃহত্তর ছাতকের ঐতিহ্যবাহী পাথর-বালু ও চুনাপাথর ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়,  সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিভক্ত হয়ে চাঁদাবাজ আব্দুল জলিল, আজির উদ্দিন, মান্নান মিয়াজী, আলী হোসেন, বদরুল, কবির মিয়াসহ ২০-২৫ জন নৌ-পথে ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা যোগে চাঁদাবাজী করে যাচ্ছে। এসব চাঁদাবাজদের অনেকেই সরকার দলীয় কর্মী পরিচয় দিয়ে দাপটের সাথে নৌ-পথ দখল করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপকর্ম। ৫শ’, ১হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত তারা প্রতি নৌ-যান থেকে আদায় করছে। চাঁদাবাজদের নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধে নৌ-শ্রকিদের বাধ্য করা হচ্ছে। অন্যতায় নির্যাতন ও হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে নৌ-শ্রমিকদের।

বাজিতপুর এলাকার বাল্কহেড শ্রমিক সুজন মিয়া, তালেব আলীসহ ক’জন শ্রমিক জানান, চাঁদাবাজদের অত্যাচারে তারা সব সময়ই আতংকিত থাকেন। মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় এখানের প্রায় ১০-১২টি স্পটে তাদের চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া নদীর পাড়ে সরকারী জায়গায় নোঙ্গর করলেও ঘাট চাঁদা দিতে হয় আরেক শ্রেনীর চাঁদাবাজদের। ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারী হাজী আবুল হাসান জানান, নৌ-পথে বেপরোয়া চাঁদাবাজীর কারনে ব্যবসায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন সংস্থার নামে তোলা ট্যাক্সও নির্ধারিত সীমানার বাইরে থেকে তোলা হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ী মহলে বিরাজ করছে অসন্তোষ।

এদিকে ইউপি চেয়াম্যানের নেতৃত্বে চলছে সোনাই নদীর রাবার ড্যাম এলাকা থেকে বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজী। প্রতিদিন শতাধিক নৌকায় উত্তোলিত বালু দিয়ে কার্গো-বাল্কহেড লোর্ডিং করছে শ্রমিকরা। এসব নৌকা থেকে ৫০০-৭০০ টাকা করে রয়েলিটির কথা বলে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন করার ফলে সোনাই নদীর তীরে অবস্থিত বাহাদুর পুর ও বৈশাকান্দি গ্রাম পড়েছে নদী ভাঙ্গনের কবলে। পাশাপাশি কৃষি বিভাগের প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যাম পড়েছে মারাত্মক হুমকীর মুখে।

এর আগে সোনাই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে একলাবাসীর পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির ২২ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ সরকারী বাঁধা-নিষেধ থাকা সত্ত্বেও এখানে একদিনের জন্য বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। স্থানীয় ইউনূছ আলী, নুরুন্নবী, নেকির হোসেন, বিলাল মিয়া, মুহাম্মদ আলী, মদরিছ আলী, রুমান আহমদসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম ও আব্দুল জব্বার খোকনের নেতৃত্বে বৈশাকান্দি-বাহাদুরপুর গ্রামের খুরশিদ মিয়া, মন্তাজ মিয়া, আব্দুর রহিম, হাবিবুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জের আব্দুর রহিম, ছোহরাব হোসেন, রতন মিয়া, হাবিবুর রহমানসহ একটি সিন্ডিকেট বালু নৌকা থেকে চাঁদা আদায় করছে।

গত ২৫ জুন সোনাই নদীতে অভিযান চালিয়ে বৈশাকান্দি-বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা খুরশিদ মিয়া ও নুরুন্নবীকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু সোনাই নদীতে চাঁদাবাজী এখনো চলমান রয়েছে।এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) তাপস শীল জানান, এখানের নৌ-পথে চাঁদাবাজীর বিষয়টি জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমটির সভায় আলোচনা হয়েছে। শিঘ্রই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নৌ-পথে অভিযান চালাবে। আগামী ২৯ আগষ্ট বিআইডব্লিউটিএ’র ইজারার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সোনাই নদীতে বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজীর বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:১১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৯ আগস্ট ২০১৯

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com