মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ : নজরকাড়া সৌন্দর্য, সেইসাথে তেল হিসেবেও ব্যবহার রয়েছে। বলছি সূর্যমুখীর কথা। নবীগঞ্জ উপজেলা প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন এক কৃষক। আর এইসব মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহে চোখ জুড়াতে আসছেন দর্শনার্থীরা। কৃষি অধিদপ্তর বলছে, কম সময় আর স্বল্প খরচে ভালো লাভ পাওয়ায় বেশ খুশি কৃষকও। দিন দিন এ অঞ্চলে সূর্যমূখী ফুল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার মান্দারকান্দি গ্রামের পার্থ সারথি ঘোষ বাড়ীর পাশের ৬২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। ইতোমধ্যেই গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। পার্থ সারথি ঘোষের সফলতা দেখে অন্যান্য চাষীরাও এবার সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে পার্থ সারথি ঘোষ বলেন- সূর্যমূখী ফুলের চাষে বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। কর্তন করতে কিছু টাকা খরছ হবে। পুরো ফসলে সামান্য রাসায়নিক সার আর দুইবার সেচ দিতে হয়। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগীতায় ফসলে সফলতা পেয়েছি। আগামীতে আরো ১০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের পরিকল্পনা আছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী অলক কুমার চন্দ্র বলেন- আগে ওই জমিতে বছরে একবার ধানের ফসল হতো। তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করার জন্য এবারই প্রথম সূর্যমুখী ফুলের চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়। কারণ সয়াবিনের চেয়ে সূর্যমুখীর তেল বেশি পুষ্টিগুনসম্পন্ন। আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় এ ফুলের চাহিদা বেড়েই চলেছে। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচ আর অধিক লাভ হওয়ায় নবীগঞ্জের কৃষকরা সূর্যমুখীর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। যেখানে বছরে ১ বার ধান ফসল হতো সেখানে এবার সূর্যমূখী ফুলের বীজ বপন করার পর ১শ থেকে ১শ ১০ দিনে ফুল তোলা যায় বলেও জানান অলক কুমার চন্দ্র।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম মাকসুদুল আলম বলেন- এ বছর সূর্যমুখী ফুলের চাষীদের রাজস্ব প্রকল্প থেকে ও প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় ফসল করতে বীজসহ সার্বিক সহযোগীতা করা হয়েছে। এটা আমাদের কৃষি বান্ধব সরকারের একটা বিশেষ অর্জন এবং মুজিব বর্ষে সফল ফসল হয়েছে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক তমিজ উদ্দিন খান বলেন- নবীগঞ্জে এই প্রথম এক সাথে ৬২ বিঘা সূর্যমূখী ফুলের চাষ হয়েছে। এখন এই প্রকৃতির অপরূপ সুন্দর্য দেখে ফুলে ফুলে সজ্জিত এই নবীগঞ্জের মাঠ। এই ফুলের সুন্দর্য উপভোগ করছেন প্রতি শ্রেণী পেশার লোকজন। সূর্যমুখী ফুলের এই সফল ফসলের ফলে বাংলার কৃষিতে নতুন মাত্রা সংযোজন হয়েছে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার তেল আমদানী করা হয়। দেশের চাষকৃত সূর্যমূখীর মাধ্যমে তেলে ঘাটতি পূরন করা সম্ভব। এই তেল অনেক পুষ্টিকর এবং অন্য তেলের চেয়ে অনেক ভালো। হবিগঞ্জ জেলায় ৫২০ বিঘা জমিতে শতাধিক কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। চাষ করতেও অনেক কম সময় লাগে। এ বছর আড়াই কোটি টাকার তেল বিক্রি করা হবে বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা।
Posted ৮:৩২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৩ মার্চ ২০২০
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad