আশিক মিয়া, দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি : দোয়ারাবাজারে ভর্তি ও সেশন ফি ভারে নুয়ে পড়ছে শিক্ষার মেরুদণ্ড । প্রতিষ্ঠান গোলো মানছে না সরকারী আইন। টাকা ছাড়া মিলছে না মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলোতে সরকারি বিনামূল্যের বই। ভর্তি সেশন ফি অজুহাতে বই উৎসবের দিনও বই পায়নি অধিকাংশ শিক্ষার্থী।বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে বই পাওয়ার কথা থাকলেও ভর্তির টাকা জোগার করতে না পারায় বই না নিয়েই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বছরের প্রথম জানুয়ারি কোনোরকম শর্ত ছাড়াই শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে বই পাওয়ার কথা কিন্তু দোয়ারাবাজারে উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি সেশন ফি ছাড়া বিনামূল্যের বই দেয়া হয়নি। ফলে নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও নতুন বইয়ের সঙ্গে এখনও পরিচয় ঘটেনি অনেক শিক্ষার্থীর। সরকারের যে মহৎ উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নের জন্য বিনামূল্যে বই দিচ্ছেন তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সরজমিনে দেখা গেছে, বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজ ও বাঁশতলা চৌধুরীপাড়া শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিদ্যালয়ে একই চিত্র । শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে ভর্তি ও সেশন ফি দেয়ার পরই মেলছে বই। অন্যরা বই নিতে বিদ্যালয় উপস্থিত হলেও সেশন ফি পরিশোধ না করায় বই না নিয়ে ফিরতে হয়েছে বাড়িতে। এদিকে বোর্ড নির্ধারিত ফি-নিতে নারাজ প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ।
উপজেলা সদরের বাহিরে সরকারী নির্ধারিত সেশন ফিসহ ৫০০ নেয়ার কথা থাকলেও এই নিয়ম মানছেননা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ। বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে ৮ শত টাকা, ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে নেয়া হচ্ছে ১ হাজার টাকা, ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে নয়া হচ্ছে ১২ শত টাকা, এই অতিরিক্ত ফি নেয়ার পর শিক্ষার্থীদের বই দিচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দোহালিয়া প্রগতী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি ফি ৮শত ২০টাকা, ৭ম শ্রেণীতে ৮শত টাকা, ৮ম শ্রেণীতে ৮শত ১০টাকা, ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে ৮শত ৪০ টাকা নিয়ে শিক্ষার্র্থদের বই দিচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বাঁশতলা চৌধুরীপাড়া শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে নেয়া হচ্ছে ৬ ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ ম শ্রেণী পর্যন্ত ১ হাজার টাকা।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রতি বছরের শুরুতে কোনো রকম খাত না দেখিয়েই সেশন ফির নামের প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনৈতিকভাবে আদায় করছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা। সরকারের নির্ধারিত নীতিমালা অমান্য করে গণহারে ফির নামে এভাবে অর্থ আদায়ের ঘটনা অভিভাবক মহলে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিও চরমভাবে ক্ষুণ্য হচ্ছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৩৫টি ( বিদ্যালয় ২২ টি ও মাদ্রাসা ১৩ টি) মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। অতিদরিদ্র অভিভাবকরা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সামান্যতম ছাড় না পাওয়ায় তারা নিরুপায় হয়ে অনেকেই গাছ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি বিক্রি করেই সেশন ফির অর্থদণ্ড দিয়ে সন্তান পড়াচ্ছেন। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হওয়ার পরও উপজেলা শিক্ষা অফিস এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না। অভিজ্ঞ মহলের মতে, বছরের শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সরকারিভাবে গোপনে তদারকির ব্যবস্থা করা হলেই চলমান এ নিয়ম থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মেহের উল্লাহ জানান, বইয়ের সঙ্গে সেশন ফি এর কোনো সম্পর্ক নেই। সেশন ফি ছাড়াই প্রত্যেক শিক্ষার্থী বিনামূল্যে বই পাবে। সরকারের নীতিমালার বাইরে সেশন ফির নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারি বোর্ড নির্ধারিত উপজেলা সদরের স্কুলে ১ হাজার টাকা আর সদরের বাহিরে স্কুলে নিতে পারবে সেশন ফি সহ ৫ শত টাকা