আলম সাব্বির, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা: বিপুল সম্ভাবনা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে ডালা সাজানো বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিগন্তে অবস্থিত ভাটির জনপদ খ্যাত সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সিমান্ত ঘেঁষা যাদুকাটা নদী ।প্রকৃতির নান্দনিক রূপে সজ্জিত এ নদীকে কেউকেউ সম্পদের নদী, শ্রম ও সমৃদ্ধির নদীও বলে থাকেন।কারণ এ নদীতে প্রতিদিন বালি,পাথর,কয়লা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন আনুমানিক ২০ হাজার শ্রমিক।
শ্রমিকদের একটি অংশ নদীর স্বচ্ছ পানির নিচে বালির সাথে মিশে থাকা কয়লা ঠ্যালা জালিতে ছেকেঁ বালি হতে আলাদা করে বস্তায় ভরে স্থানীয় মহাজনদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এসব কয়লা শ্রমিকদের বেশির ভাগই নারী শ্রমিক।স্বামী পরিত্যাক্তা বিধবা কিংবা দরীদ্র পরিবারের স্ত্রীরা স্বামীর সাথে কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য নদীর ঠান্ডা জলে নেমে কয়লা উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
অনেক ক্ষেত্রে এসব পরিবারের শিশুরাও মা-বাবার সাথে কয়লা উত্তোলন করতে দেখা যায়।কয়লা উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত বেশির ভাগ শিশুদের বয়স ১১বছর হতে ১৪ বছরের মধ্যে ।এদের কেউকেউ আবার স্কুল পড়ুয়া।
শিশু শ্রম সরকারী ভাবে নিষিদ্ব হলেও এ আইন সম্পর্ক ধারণা নেই সেইসব শিশু কিংবা তাদের অভিভাবকদের। দরিদ্র মা বাবাকে কাজে সহায়তা করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার প্রাণপণ চেষ্ঠা করে যাচ্ছে এসব শিশুরা। মূখায়বে রয়েছে পরিশ্রমের ছাপ তবু সুখী ওরা, কারণ কম করে হলেও ওই সব শিশু শ্রমিকরা হেসে খেলে প্রতিদিন ১বস্তা কয়লা উত্তোলন করতে পারে এবং সেই কয়লা প্রক্রিয়াজাত করে ৪’শ থেকে ৪’পঞ্চাশ টাকা বিক্রি হয়।আর তাতেই মিটছে ওদের তিন বেলা খাবারের চাহিদা, লেখাপড়ার খরচ আর ভাল জামা কাপড়ের নিশ্চয়তা।
ভারত মেঘালয় পাহাড়ের পাদঘেঁষে প্রবাহিত এনদীতে বর্ষায় পানির স্রোতের সাথে গড়িয়ে আসা কয়লা মিশ্রিত বালি বাংলদেশ অংশে প্রবেশের পর শ্রমিকরা পানি কমার সাথে সাথে কাজে নেমে পড়ে। বছরে ৫/৬ মাস কাজ করে প্রতিজন নারী শ্রমিক গড়ে ৪০/৫০ হাজার টাকা রোজগার করে থাকেন। এতে করে সংসারের স্বচ্ছলতার পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে পারছেন অনায়াসে।
তাহিরপুর উপজেলাসহ পার্শবর্তী বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার অনেক নারী শ্রমিকরা একাজে নিয়োজিত, এদের মধ্যে স্রুপগঞ্জের জান্নাত আরা, লাউড়ের গড়ের কলসুমা,মিনাসহ অনেকেই কয়লা কুড়িয়ে বিক্রি করে সংসারের স্বচছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।কুড়ে ঘর থেকে টিনসেড ঘর নির্মাণ করে গরু ছাগল ক্রয় করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছেন ।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু রায় বাবুল বলেন, এ অঞ্চলের শ্রমিকরাই আমার চালিকা শক্তি। তাদের সুখ দুঃখের সাথে আমার সুখ-দুঃখও জড়িত। শ্রমিকরা কাজ করতে পারলে নিজেদের সাংসারিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি ছেলেমেয়েদেও লেখাপড়া করাতেও উৎসাহী হবে।
Posted ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad