মঙ্গলবার ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ছাতকে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে সংখ্যালঘু এক পরিবার গৃহবন্দি

বিজয় রায়, ছাতক প্রতিনিধি:   মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০১৯     233 ভিউ
ছাতকে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে সংখ্যালঘু এক পরিবার গৃহবন্দি

গৃহবন্দি পরিবারের লোকজনদের ঘরের বাইর হলেই এবং তাকে ধরে এনে দিতে পারলে চেয়ারম্যান সাহেব ওই ব্যক্তিকে ৫ হাজার টাকা পুরস্কৃত করবেন। ছাতক উপজেলার ছৈলা-আফজালাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক গয়াছ আহমদের এমন ঘোষনায় এলাকায় হৈ-ছৈ পড়ে যায়।

ওই ঘোষনায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে একই ইউনিয়নের কহল্লা গ্রামের এক সংখ্যালঘু পরিবার। টানা ১২ দিন গৃহবন্দি থাকার পর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিবারের বন্দিদশা কিছুটা শিথিল হলেও অজানা আতংকে কাটছে ওই গৃহবন্দি পরিবারের দিনকাল।

একটি গণতান্ত্রিক স্বাধীন দেশে গ্রাম্য মাতব্বরদের এমন জঘন্য অনুশাসন দেশের প্রচলিত আইনকে চ্যালেঞ্চ করার সামিল বলে অনেকেই মনে করছেন। এ নিয়ে এলাকা জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এ ঘটনায় গৃহবন্দি পরিববারের কর্তা মৃত গোপেন্দ্র দেবনাথের পুত্র নিশিকান্ত দেবনাথ গত ১১ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ছাতক থানার ওসি বরাবরে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিশিকান্ত দেবনাথের সাথে লাকেশ্বর পশ্চিম পাড়া গ্রামের মৃত মফিজ আলীর পুত্র হারিছ আলী, মৃত মছদ্দর আলীর পুত্র আমজদ আলী ও কহল্লা গ্রামের মৃত গপেশ দেবনাথের পুত্র গৌরমনি দেবনাথের দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। নির্যাতিত পরিবারকে অজ্ঞাত রেখে গত ৩১ জুলাই লাকেশ্বর বাজারে ইউপি চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদের সভাপতিত্বে গ্রাম্য মাতব্বরদের অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নিশিকান্ত দেবনাথের পরিবারকে গৃহবন্দি রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই রাতেই নিশিকান্ত দেবনাথের বাড়িতে এসে কহল্লা গ্রামের ছাদ মিয়া ও দিলাল মিয়া গৃহীত সিদ্ধান্তের কথা তাদেরকে জানায়। তারা যদি ঘরের বাইর হয়, তখন তাদের ধরে নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ৫ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষনা করেছেন বলে তাদের হুশিয়ার করা হয়।

চেয়ারম্যানর এমন ঘোষনায় টানা ১২ দিন গৃৃহবন্দি অবস্থায় মানবেতরভাবে দিনাতিপাত করে নিশিকান্তর পরিবার। গৃহবন্দি থাকায় পরিবারের লেখাপড়া করা ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে পড়ে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠনে না যেতে পারায় তাদের রোজগারের পথও বন্ধ হয়ে যায়।

নিশিকান্ত দেবনাথের ছোট ভাই শশী দেবনাথ জানান, ‘১৩ আগষ্ট ছাতক থানার এসআই ও তদন্তকারী কর্মকর্তা পীযুষ কান্তি দেবনাথ মোবাইল ফোনে তাদের গৃহবন্দি থেকে মুক্ত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। এতে তারা পুরোপুরি শংকামুক্ত হতে পারছে না। চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের পরিবারের সদস্যদের চলাফেরায় নজরধারী করছে বলে তারা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারছেনা। তিনি আইনী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।’

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদের সাথে মুঠোফোনে বার-বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ছাতক থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, “অভিযোগটি জিডি আকারে নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তাপশ শীল অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে জানান, ‘নিশিকান্ত দেবনাথের পরিবারকে স্বাভাবিক চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছেন। অন্যতায় প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন তিনি। অভিযোগকারী পরিবারের সাথে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বর্তমানে কোন সমস্যা হচ্ছে না বলে ওই পরিবারের লোকজন তাকে জানিয়েছে।’

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:৪৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০১৯

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(623 ভিউ)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com