বুধবার ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কুলাউড়ায় একাধিক মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে উচ্ছেদ পায়তারার অভিযোগ

বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৯     156 ভিউ
কুলাউড়ায় একাধিক মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে উচ্ছেদ পায়তারার অভিযোগ

জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : কুলাউড়ায় শতাধিক বছরের দখলীয় বসতভিটা থেকে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে উচ্ছেদের পায়তারা চলছে। পরিবারটির অভিযোগ পাক বাহিনীর সহযোগি একটি পরিবার এই ষড়যন্ত্র করছে। তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে।  বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করে এবং রেকর্ডপত্র যাচাই করে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. সিরাজ মিয়া একজন সরকারি ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা। তার পিতা মরহুম আব্দুর রহিম সহ বংশধরেরা যুগ যুগ ধরে পাবই মৌজার ৪১২১ দাগ সহ বিভিন্ন দাগে ৬.২৫ একর ভুমি ভোগ দখল ও ব্যবহার করে আসছেন।

১৯৫৬ সালে প্রজা স্বত আইনে জমি জরিপ শুরু হলে জরিপে আসা লোকজন তাদের বাড়িতে থাকার সুবাদে একটি প্রভাবশালী পরিবার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বসতবাড়িসহ এই জমি তাদের নামে রেকর্ড করিয়ে নেয়। ৬০ ইংরেজির পরচা বের হলে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়ার বাবা উক্ত জমির মালিক ও দখলকার আব্দুর রহিম গং রেকর্ড ফিরে পাওয়ার জন্য এস টি এক্ট এর ১৪৩ ধারার বিধান মতে মৌলভীবাজার দ্বিতীয় মুন্সিফি আদালতে রেকর্ড সংশোধনের মামলা (মিস কেইস নম্বর-৫৭/১৯৬৯) দায়ের করেন।

দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৯৭০ সালে বিজ্ঞ আদালত বাদীর রেকর্ড সংশোধনের আবেদন সঠিক এবং সে আলোকে রেকর্ড সংশোধনের আদেশ দেন।

মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া জানান, উক্ত মামলার রায় হয় দেশের উত্তাল পরিস্থিতিতে। প্রথমে নির্বাচন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তিনি বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এলাকায় রাজাকার আলবদরদের তৎপরতা বেশি থাকায় আমাদের পরিবারের লোকজন নিজেদের মতো পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। দীর্ঘ ৯ মাস পর দেশ স্বাধীন হলে আমরা বাড়িতে ফিরে কুলাউড়া ভুমি অফিসে রায় কার্যকর করতে যাই। মামলার আদেশ দেখে ভুল রেকর্ড কেটে আদালতের নির্দেশ মতো রায়টি কার্যকর করে ভুমি অফিস। ভুমি অফিসের মিস কেইস নম্বর ১৯৪/৭২-৭৩ এর আলোকে রেকর্ড সংশোধন হয়। আমাদেরকে ৪১২১ দাগসহ বিভিন্ন দাগে ৬.২৫ একর জমির পর্চা (মৌজা পাবই, জে এল ১২৬ , খতিয়ান -৬৭১) দেয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া জানান, বিএনপি জামায়াতের জোট সরকারের সময়ে হঠাৎ কোটিপতি বনে যাওয়া পাকিস্তানী বাড়ির মো. বদরুল ইসলাম মার্কেট বানানোর জন্য ২-৩ বছর যাবত আমার রাস্তার পাশের ৭ শতাংশ জমি বিক্রির প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে আমি যা চাইবো সে পরিমাণ টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমার বসবাসের আর জমি না থাকায় আমি এই প্রস্তাবে রাজি হইনি।

তিনি অভিযোগ করেন,  আমার ভাই ভাতিজা এমনকি নাবলক শিশু ও ষাটোর্ধ্ব মহিলাদের বিরুদ্ধেও মামলা (কুলাউড়া থানার মামলা নম্বর ২৩ তাং ২৩/১১/১৯ ধারা ১৪৩/ ৪৪৭/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৫৪/৩৭৯/৪৪৭/১১৪ দ বি) করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে সরাসরি যারা পাক বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে তাদের মামলায় আমার পরিবারের ষাটোর্ধ্ব মহিলাদের আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে।

আদালতের রায়ে এই দাগে আমার পরিবারের ৬০ শতক জমি। বাটোয়ারা মতে আমি পেয়েছি ৭ শতক। অথচ বাকি জমির কথা কিছু না বলে শুধু আমার ৭ শতাংশ ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন। তাহলে মুক্তিযুদ্ধ করাটাই কি আমার অপরাধ? তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এদিকে মো. বদরুল ইসলামের স্ত্রী এমরানা আক্তারের মামলার সাথে সংযুক্ত হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র যাচাই করে দেখা যায়, এমারানা আক্তার ও মো. বদরুল ইসলামের বোন পিয়ারা বেগম হাসপাতালে বর্হিবিভাগের ব্যবস্থাপত্র। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক জানান, আঘাত গুরুতর কিছু নয়। তারা হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন না।

মামলায় এমরানা আক্তারে দেয়া মোবাইল নাম্বারে বিষয় জানতে চাইলে ফোন রিসিভ করেন পিয়ারা বেগম। তিনি জানান, রাত্রে যখন ঘটনা ঘটে আমি বলতে পারিনা। পরদিন সকালে আমি তাদের জিজ্ঞাসা করতে গেলে সিরাজ মিয়ার পরিবারের লোকজন তার উপর হামলা চালায়।

এব্যাপারে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইয়ারদৌস হাসান জানান, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বিরুদ্ধে জমি জোরদখলের ও হামলার অভিযোগ রয়েছে। বাদি আহতের ঘটনা সঠিক না সঠিক নয় সেটা তদন্তের বিষয়।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com