মঙ্গলবার ৩০শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আমার স্মৃতিতে ভয়াল ২১ শে আগস্ট

আকবর হোসেন   বুধবার, ২১ আগস্ট ২০১৯     303 ভিউ
আমার স্মৃতিতে ভয়াল ২১ শে আগস্ট

“ঘটনার ১৪টি বছর অতিবাহিত হলেও আজো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় সেই দিনের ভয়াল স্মৃতি, এখনো মনের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি ঝরে, কখনোবা ভয়ে আতংকিত হয়ে হয়ে উঠি, কখনোবা স্বপ্নে সেই স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে, মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় দু:স্বপ্নে। তখন নিজেকে আর স্থির রাখতে পারিনা, যন্ত্রনায় মন ছটফট করে, আমার সামনে সেই দিন প্রাণ দিতে দেখেছি অনেক সহযোদ্ধাদেরকে।”

 

২১ শে আগস্ট, স্মৃতিতে ভাসে ভয়ংকর সেদিনের কথা। আমার দেখা ভয়াল সেই ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট একটি বিভীষিকাময় দিন। যন্ত্রনা আর কষ্টের দিন, না ভুলার দিন, স্বজন আর প্রিয়জন হারানোর দিন।

এই দিনটি আমার জীবনের একটি স্বরনীয় ভয়াবহ ও কঠিন দিন। কারণ ২১ আগস্ট দিনটিতে আমি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী জনসভায় ছিলাম। জনসভার আগে কাকার(সুরঞ্জিত সেন) সাথে জিগাতলার বাসা হতে একসঙ্গে জনসভায় স্থলে আসি।

ঘটনার ১৪টি বছর অতিবাহিত হলেও আজো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় সেই দিনের ভয়াল স্মৃতি, এখনো মনের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি ঝরে, কখনোবা ভয়ে আতংকিত হয়ে হয়ে উঠি, কখনোবা স্বপ্নে সেই স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে, মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় দু:স্বপ্নে। তখন নিজেকে আর স্থির রাখতে পারিনা, যন্ত্রনায় মন ছটফট করে, আমার সামনে সেই দিন প্রাণ দিতে দেখেছি অনেক সহযোদ্ধাদেরকে।

গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর , ছবি- ইন্টারনেট

সেই দিন আমিও সহযোদ্ধাদের মৃত্যুর মিছিলে শরীক হতে পারতাম। মাথার ভিতরে একটির পর একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খায়। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট পরন্ত বিকেল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও দুর্নীতি বিরোধী শান্তিপূর্ন সমাবেশ চলছিল। জনসভা চলাকালীন সময়ের প্রথম দিকে আমি মঞ্চ মানে(খোলা ট্রাকের) খুব কাছাকাছি ছিলাম,অধিকাংশ সময়ইটাই ছিলাম, সঙ্গে থাকা এলাকার বড়ভাই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও যুবলীগের কয়েকজন সাথে করে বাটা দোকানের কাছে এসেছিলাম ঝাল-মুড়ির জন্য।

আমি সাধারণ কোনো সভায় গেলে চারপাশ ঘুরে বেড়াই, মঞ্চের কাছাকাছি থাকি, এটা আমার অভ্যাস, সেদিনও ছিলাম। বাটা দোকানের পাশে আসার মিনিট পাচেঁক পর হঠাৎ একটা বিকট শব্দ শুনতে পেলাম… আরো একটা… এরকম একের পর একটা বিকট শব্দে বোমা ফাটছে, আর গ্রেনেড বৃষ্টির মত পড়ছে। কেউ যদি নিজের চোখে এই দৃশ্য না দেখে তাহলে বলে বা লিখে বুঝানোর মত নয়। শুরু হলো মানুষের দৌড়া-দৌড়ি, চিৎকার, কান্নার রোল, বাচাও-বাচাও ততক্ষনে রক্তে রঞ্জিত বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ পুরো এলাকা। কেউ কাউকে উদ্ধারের মত নয়, যে যার মত দৌড়াচ্ছে, মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে, রক্ত আর রক্ত, চিৎকার আর চিৎকার!

সেদিন নিথর দেহ গুলি পড়েছিলো কেউ উদ্ধার করতে আসেননি। এত সহযোদ্ধার মৃত্যু এত কাছ থেকে দেখব জীবনে কখনো ভাবিনী। হামলার সময় মহান সৃষ্টি কর্তার কৃপায় ও আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মীদের মানব ঢাল তৈরীর ফলে শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও সেইদিন শহীদ হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহর্ধমিনী মহিলা আওয়ামীলীগের নেত্রী আইভি রহমান, আব্দুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, হাসিনা মমতাজ, রীনা বেগম, মোস্তাক আহমদ, মাহবুবুর রশীদ, সুফিয়া বেগম, আবুল কালাম আজাদ, লিটন মুন্সি, মোহাম্মদ হানিফ, রেজিয়া আক্তার, রফিকুল ইসলাম, আতিক সরকার, নাসির উদ্দিন, রতন শিকদার, আবুল কাশেম, মোমেন আলী, বেলাল হোসেন, জায়েদ আলী সহ ২৪ জন নেতাকর্মী।

গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর , ছবি- ইন্টারনেট

অনেকেই আবার হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। আবার হাসপাতালে নেবার পথে অনেকেই মারা গেছেন। সাবের হোসেন চৌধুরীসহ আরো কজন মিলে আমরা সুরঞ্জিত কাকাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাই।

সেই সময় অনেকে মানব প্রাচীর তৈরী করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রানে বাঁচান। প্রানে বাঁচলেও শেখ হাসিনাসহ ৫ শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্পিন্টার নিয়ে আজো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখনো বাম চোখে ঝাপসা দেখেন তিনি। সেই দিন আহত হন জাতির বিবেক ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার অনেক সাংবাদিক বন্ধুরা। সেই দিনের শান্তিপূর্ন সমাবেশে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিনিধি নিজামী, মুজাহিদদের প্রত্যক্ষ ত্বতাবধানে আওয়ামীলীগকে নেতৃত্ব শুন্য করতে, এদেশ থেকে চিরতরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করার লক্ষে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিলো। সেই দিন সরকারী আইন-শৃংখলা বাহিনী দর্শকের ভুমিকায় থেকে ঘটনা অবলোকন করেছে মাত্র।

কেউ হতাহতদেরকে বাচাঁতে এগিয়ে আসেননি বরং আহতদেরকে যারা বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন উল্টো তাদেরকে লাটি পিঠা খেতে হয়েছে। ধিক জানাই তোদেরকে যারা মানুষ হয়ে সেদিন অমানুষের মত আচরণ করেছে তাদেরকে। তৎকালীন সরকার প্রধান বা তার কোন প্রতিনিধি সেইদিন ঘটনাস্থলে যাননি, মিডিয়াতে নিন্দা বা বিবৃতি দেননি, এমনকি হাসপাতালে পর্যন্ত দেখতে যাননি আহত ও নিহতদের দেখতে। আমাদের স্বাধীন দেশের জন্য এর চেয়ে ঘৃনার আর লজ্জার কি আছে?

আমি নিজেও সেইদিন সহযোদ্ধাদের সাথে মৃত্যুর মিছিলে সঙ্গী হতে পারতাম, সৃষ্টি কর্তার অশেষ কৃপায় বেচে যাই, বেচে থাকা সহযোদ্ধা হিসেবে আজো তাদের মৃত্যু আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই ভয়াল স্মৃতি।

সেইদিনের গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমান। ছবি- ইন্টারনেট

২০০৪ সালের পর থেকে ২১ আগস্ট এলে একাধারে কয়েক বছরই ছুটে গিয়েছি সহযোদ্ধাদের টানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়েতে। এরপর কয়েক বছর ধরে যেতে পারিনা, মন টানে, মন চায় ছুটে যেতে, পারিনা। না পারার যন্ত্রনা আমায় কাদায়। খুব ইচ্ছে ছিলো যাবার, পারিনি তবে মনে রেখো সহযোদ্ধারা, তোমাদের কাছে যেতে না পারলেও আমি তোমাদের ভুলে যায়নি। তোমাদের কথা মনে পড়ে, দিন-রাত সব সময়। তোমাদের পাশে আছি, থাকব অনাদিকাল। তোমাদের রক্তের বদলা ও বিচারের পূর্ব পর্যন্ত তোমাদের পাশেই আছি। সহযোদ্ধারা তোমরা ভালো থেকো।

লেখক: গনমাধ্যম কর্মী ও
গনযোগাযোগ, সাংবাদিকতা বিষয়ক সম্পাদক,সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:১৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২১ আগস্ট ২০১৯

Sylheter Janapad |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক ও প্রকাশক
গোবিন্দ লাল রায় সুমন
প্রধান কার্যালয়
আখরা মার্কেট (২য় তলা) হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ফোন
+88 01618 320 606
+88 01719 149 849
Email
sjanapad@gmail.com