আলম সাব্বির, তাহিরপুর প্রতিনিধিঃ
‘‘বাবা দোয়া করবেন নিজের প্রাণের বিনিময়ে হলেও যেন দেশ স্বাধীন হয়, মায়ের প্রতি খেয়াল রাখবেন মৃত্যুর মুখে থেকে যুদ্ধ করছি কখন জানি মৃত্যু হয় জানিনা। দেশ স্বাধীন না হলে জীবনের কোন মূল্যই থাকবেনা তাই যুদ্ধকেই পাথেয় হিসাবে নিলাম। মৃত্যূর মুখে থকেে যুদ্ব করছি ।আমার কিছু হয়ে গেলে আপনার দুই মেয়েকে পুরুষের মতই শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন।”
শহীদ সিরাজুল ইসলাম একজন বীরবিক্রম। মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন পূর্বে ৩০ জুলাই যুদ্বরত অবস্থায় তাঁর বাবাকে এভাবেই লিখেছিলেন তাহিরপুর উপজেলার যুদ্ব-কালীন সাবসেক্টর টেকেরঘাট হতে।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্বে যে সকল বীর সৈনিক মাতৃভূমি রক্ষায় অসামাণ্য নৈপূন্য প্রদর্শন করেন, বুকের রক্ত ঝড়িয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেন তাদের মধ্যে একজন শহীদ সিরাজুল বীর বিক্রম।
কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের তুখর ছাত্রনেতা সিরাজুল ইসলাম ৭ই মার্চে বঙ্গুবন্ধুর ভাষনের পর দেশ মাতৃকার টানে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনার থানার গ্রাম ছিন্নি থেকে কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে যোগদেন মুক্তিযুদ্ধে।
সিরাজুল ইসলাম ভারত মেঘালয় রাজ্যের বালাট কেম্প হয়ে আসাম রাজ্যের ইকুয়ান যান এবং সেখানে তিনি গ্যারিলা প্রশিক্ষন শেষে মেজর মীর শওকত আলীর অধিনে যুদ্ধ কালীন ৫ নম্বর সাবসেক্টর টেকেরঘাটে যোগ দেন। তার দক্ষতার কারনে তিনি একটি কোম্পানীর সহকারী কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন।
সারা দেশে রেল যোগাযোগ ব্যহত হওয়ার পর হানাদার বাহিনীররা তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহুকুমার গুরুত্ব পূর্ন নদীবন্দর জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার দিয়েই পাকহানাদের রসদ সিলেট পৌছানো হত তাই এই নদী বন্দর কে মুক্ত করার জন্য মিত্র বাহিনীর মেজর বাট ও জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে ৩৬ জন চৌকুস মুক্তিযোদ্বাদের নিয়ে গঠন করা হয় একটি এডভান্স পাটি আর এ পার্টির নেতৃত্ব দেওয়া হয় সাহসী যোদ্ধা সিরাজুল ইসলামকে।
১৯৭১ সালের ৮ আগষ্ট এডভান্স পার্টি সুর্যাস্তের পরপরই শুধু মাত্র ত্রি-নট থ্রি রাইফেল আর গ্রেনেড নিয়ে কমান্ডার সিরাজের নেতৃতে ২৫ মাইল উত্তর থেকে অভিযান শুরু করে দুটি নৌকায় করে সাচনা পৌছে পাক হানাদার বাহিনীর সুরক্ষিত ব্যাংকারে গ্যারিলা আক্রমন করে। অতর্কতি এ হানায় ব্যাংকারে অবস্থানরত পাক বাহিনীদের মৃত্য হয় এবং তাদের প্রতিরোধ সম্পুর্ন ধ্বংস হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম আনন্দে লাফিয়ে উটে জয়বাংলা স্লোগান দিতে থাকেন এমন সময় পাক বাহিনীর একটি বুলেটের আঘাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং শহীদ হন।
আর ফিরে যাওয়া হলোনা তার ছোট্র একটি গ্রাম ছিন্নিতে যেখানে প্রতীক্ষায় থাকা মা-বাবা, ভাই-বোনের কাছে । মৃত্যুর পর শহীদ সিরাজুল ইসলামকে পূর্ন সামরিক মর্যাদায় টেকের ঘাটসাব সেক্টরে সমাহিত করা হয় । এই অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ বঙ্গবন্ধু সরকার শহীদ সিরাজুল ইসলাম কে বীর বিক্রম উপাধীতে ভূষিত করেন।
Posted ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯
Sylheter Janapad | Sylheter Janapad