আজমিরীগঞ্জ প্রতিনিধি :
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর বদলির আদেশ অবশেষে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান এক অফিস আদেশে আজমিরীগঞ্জ থেকে জামালপুরের বদলীর আদেশ প্রত্যাহার করেন।
জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সেকেন্ড রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্র“ভমেন্ট প্রজেক্টের (আরটিআইপি-২) অধীন ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ ভায়া শিবপাশার ৪ কিলোমিটার সড়কের পুণর্বাসনের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর দরপত্র আহ্বান করে। কাজটি পান আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মর্তুজা হাসান। ৪ কোটি ৯০ লাখ ১৬ হাজার ১শ’ ৩৪ টাকার এই কাজটির কার্যাদেশ দেয়া হয় চলতি বছরের ২১ মার্চ। আগামী বছরের ২৭ জুনের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা। ঠিকাদার মর্তুজা হাসান শিডিউল মোতাবেক কাজ না করায় উপজেলা প্রকৌশলী তানজির উল্লাহ ঠিকাদারের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ১৭ নভেম্বর প্রকল্প এলাকার ব্যবহৃত সামগ্রির নমুনা সংগ্রহ করে এলজিইডির ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করান। শিডিউল অনুযায়ী বালুর স্তর ২৫০ এমএম থাকার কথা সেখানে স্থানভেদে সর্বনিম্ন ২শ’ থেকে সর্বোচ্চ ২শ’ ৪০ এমএম এবং বালির দানার আকার ০.৫০ এফএম স্থলে ০.৩০ এফএম দিয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় ধরা পড়ে। এছাড়া সাব বেইজ লেয়ারে বালু ও কংক্রিটের অনুপাত ৫০ঃ৫০ হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। ল্যাবরেটরির রিপোর্টে এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২৭:৭৩ এবং সর্বোচ্চ ৩৮:৬২ পাওয়া যায়।
১৮ নভেম্বর হবিগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল বাছির ঠিকাদার মর্তুজা হাসানকে এ সমস্ত কাজ সংশোধন ও উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশনা ও স্পেসিফিকেশন মোতাবেক কাজ করার অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দেন। অন্যথায় চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মর্তুজা হাসান উধ্বতন কর্তৃক্ষের কাছে প্রকৌশী তানজির উল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বদলির আদেশ দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে হবিগঞ্জের বহুল প্রচারিত ‘দৈনিক প্রভাকর ’ সহ বিভিন্ন পত্রিকায একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর নজরে মূল বিষয়টি নজরে আসে কর্তৃপক্ষের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পূণরায় তার বদলির আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
বদলির পেছনে ঠিকাদার মর্তুজা হাসানকে দায়ী করে প্রকৌশলী তানজির উল্লাহ বলেন, ‘নানা কারণে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১শ’ ভাগ কাজ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আদায় করা কঠিন। তারপরেও চেষ্টা করি ৯৫ ভাগ কাজ সঠিক হোক। সে লক্ষ্যেই কাজের মানের প্রতি আমার আলাদা নজর ছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপজেলা পরিষদের উন্নয়নকাজে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘মূলত তার দুই নম্বরী কাজে বাধা দেয়ায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম’।
হবিগঞ্জের স্থানীয় সরকার নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস সূত্র জানায়, জাইকার অর্থায়নে হিমলিপ (হাওর ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট লাইভলিহুড ইমপ্র“ভমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্পের আওতায় আজমিরীগঞ্জ-পাহাড়পুর সড়ক উন্নয়নে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকার আরও দুটি প্রকল্পে কাজ পেয়েছে মর্তুজা হাসানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাহিল-মর্তুজা (জেবি)। গত বছরের ১২ মার্চ কার্যাদেশ দেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময়সীমা পার হলেও কাজ চলছে ধীর গতিতে। প্রকল্পে কংক্রিটের ঢালাই ৭ কিলোমিটার ডুবন্ত (সাবমারজিবল) রাস্তা ও ১১টি কালভার্ট রয়েছে। দুটি কাজ যথাক্রমে এ বছরের ১৮ মার্চ ও ২১ জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিল।
সূত্র জানা যায়, শিডিউলে ৪ প্যারা (৫ সিএফটি) কংক্রিটের সঙ্গে ১ বস্তা সিমেন্ট ও আড়াই সিএফটি বালু মিশ্রণ করে ঢালাই করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার মর্তুজা হাসান ৯ প্যারা (সোয়া ১১ সিএফটি) ইটের কংক্রিট ব্যবহার করছেন দেখে উপজেলা প্রকৌশলী এতে বাধা দেন। এমতাবস্থায় ঠিকাদার রাস্তা ও কালভার্টের কাজ ফেলে রাখায় জনদুর্ভোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাকে কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হলেও তিনি কর্ণপাত করছেন না।